ঢাকার দুই সিটির প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। ঢাকায় দেড় কোটি লোকের বসবাস ধরলে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা হবে ১৩ লাখ ৫০ হাজার। বস্তিবাসীর মধ্যে করোনার সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার সোয়া তিন হাজার পরিবারের ১২ হাজার মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। স্থানীয় পর্যায়ে কোভিড-১৯ কতটা বিস্তার লাভ করেছে, তা জানতে এই জরিপ চালানো হয়। সোমবার জরিপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে আইইইডিসিআর। এই জরিপ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছে ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী
সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, রাজধানীতে গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জরিপকালে পরিবারগুলোকে পরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষণ বা উপসর্গযুক্ত এবং লক্ষণহীন বা উপসর্গহীন এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। জরিপের দিন বা আগের সাত দিনের মধ্যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে যদি কোভিড ১৯-এর চারটি উপসর্গের একটি চিহ্নিত হয়েছে, সেই পরিবারকে লক্ষণযুক্ত পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জরিপের দিন বা এর আগের সাত দিনের মধ্যে যদি কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে কোভিড ১৯-এর কোনো লক্ষণ না পাওয়া গেলে সেই পরিবারকে লক্ষণহীন বা উপসর্গহীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। লক্ষণযুক্ত ও লক্ষণহীন উভয় পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করা হয়েছে।
আইইডিসিআর পরিচালক জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন তিন হাজার ২৭৭ পরিবারের ওপর এ জরিপ কার্যক্রম চলে। জরিপকালে ২১১ জন লক্ষণযুক্ত ব্যক্তি চিহ্নিত এবং ১৯৯ জনের পিসিআর টেস্ট করা হয়। লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের মধ্যে ৪৩৫ জন লক্ষণহীন ব্যক্তি চিহ্নিত এবং ২০১ জনের পরীক্ষা করা হয়। লক্ষণহীন পরিবারের মধ্যে থেকে ৮২৭ জন ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়। তাদের মধ্যে থেকে পরীক্ষা করা হয় ৫৩৮ জনের। এ ছাড়া একই সময় ছয়টি বস্তির ৭২০টি পরিবারের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার ৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। বস্তিতে করোনার সংক্রমণ হার পাওয়া গেছে ৬ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ৯৩ শতাংশের জ্বর, ৩৬ শতাংশের মধ্যে কাশি এবং ১৭ শতাংশের গলাব্যথা ছিল। মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে পরীক্ষার দিন শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যায়নি। করোনা শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ১৩ শতাংশ পজিটিভ, ১৫ থেকে ১৯ বয়সী মধ্যে ১২ শতাংশ এবং ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৮ শতাংশের মধ্যে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। অতএব ৯ শতাংশ হিসাবে ধরলে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার ব্যক্তির মধ্যে করোনা সংক্রিমত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে যে ২ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ৬৭ হাজার ১৩৫ জন ঢাকার বাসিন্দা।
তবে পরীক্ষা নিয়ে দুর্ভোগসহ নানা কারণে আক্রান্ত অনেকেই এ হিসাবের বাইরে রয়ে গেছেন। আবার যাদের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ সেভাবে দেখা যায়নি, তারা পরীক্ষার আওতায় আসেননি।
আইইডিসিআর পরিচালক এক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত যে পরীক্ষা করছে, তাতে ২২ শতাংশের মতো কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে। তার সঙ্গে তুলনা করলে জরিপে পাওয়া সংক্রমণের হার কম মনে হতে পারে। কিন্তু জরিপের এই ফল গুরুত্বপূর্ণ।