প্রচ্ছদ শিল্প বানিজ্য অর্থনীতি দেশে-বিদেশে অস্থির স্বর্ণের বাজার

দেশে-বিদেশে অস্থির স্বর্ণের বাজার

0
স্বর্ণের বাজার

বিশ্ববাজারে গেলো এক সপ্তাহে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়েছে। এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৫৫ ডলার বা ৩ শতাংশ কমে গেছে। স্বর্ণের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে রুপা ও প্লাটিনামের দামেও বড় পতন হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রুপার দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। আর প্লাটিনামের দাম কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে দাম কমেছে, বাংলাদেশ কমানো হয়েছে তার থেকে কম হারে। সম্প্রতি দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কামানো হয়েছে ২ দশমিক ৭০ শতংশ।

গত সপ্তাহে বিশ্বেবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮০১ দশমিক ৮২ ডলার। যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৪৬ দশমিক ৫০ ডলারে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমেছে ৫৫ দশমিক ৩২ ডলার বা ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবারেই কমেছে ১১ দশমিক ৭০ ডলার বা দশমিক ৬৭ শতাংশ।

অপরদিকে গত এক সপ্তাহে রুপার দাম ৮ দশমকি ৪২ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ১৯ দশমিক ৬ ডলারে নেমে এসেছে। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেই দাম কমেছে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর প্লাটিনামের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। হুট করে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান, এরপর আবার বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে গত কয়েক মাস ধরেই। যার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও হুটহাট স্বর্ণের দাম বাড়ছে বা কমছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ছয় মাসে দেশের বাজারে ১৭ বার স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার ঘটনা ঘটেছে।

স্বর্ণের দামের এমন অস্থিরতার বিষয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ডলারের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে স্বর্ণের দামের ওপর বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে। তবে আমাদের মূলত নির্ভর করতে হয় স্থানীয় বাজারের ওপর। তাঁতীবাজারসহ স্থানীয় যেসব জায়গায় পাকা স্বর্ণ পাওয়া যায় তার ওপরেই মূলত আমাদের বাজার নির্ভর করে।

তিনি বলেন, সরকার আমাদের স্বর্ণ দেয় না। আবার আমদানির ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা আছে তাতে বৈধভাবে বাইরে থেকে খুব বেশি স্বর্ণ আমদানি করা যায় না। মূলত স্থানীয় বাজারে পাকা স্বর্ণের দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াই। একইভাবে পাকা স্বর্ণের দাম কমলে আমরা দাম কমাই। আমরা দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সবসময় আপডেট থাকার চেষ্টা করি। প্রয়োজন হলে দিনের দিন দাম সমন্বয় করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

সর্বশেষ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার মধ্যে গত ১৮ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাজুস। তবে এই দাম কমানোর কারণ হিসেবে বাজুস থেকে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমেছে।

বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ২৭৫ টাকা কমিয়ে ৮২ হাজার ৫৬ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৫৮ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৩২৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৭ টাকা কমিয়ে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৬৯২ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ২৮৭ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য এই দাম কমানোর আগে ১০ দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে চারবার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ৭ আগস্ট ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৮০ হাজার ৪৮২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৮ হাজার ৯৯৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকা করা হয়।

তার আগে ৪ আগস্ট ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৩৪৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৬১৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৪১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫২৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ হাজার ৬৯৬ টাকা করা হয়।

এছাড়া ২৯ জুলাই ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ২৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৫৬৬ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৫৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯২৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৪৮৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৪৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ হাজার ১৭১ টাকা করা হয়।

এর দুদিন আগে ২৭ জুলাই সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়িয়ে করা ৭৮ হাজার ৫৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৮৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ৫৬০ টাকা করা হয়। সেসময় অপরিবর্তিত রাখা হয় সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version