আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান’। জলাতঙ্ক একটি মরণব্যাধী, যা প্রাণী থেকে মানুষে ও প্রাণীতে সংক্রামিত হয়ে থাকে। মূলত: কুকুরের মাধ্যমে রোগটি সংক্রামিত হয়। এখনো বিশ্বে প্রতি ৯ মিনিটে ১ জন ও বছরে ৫৫ হাজার মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে।
কুকুরকে জলাতঙ্ক থেকে নিরাপদ করতে বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্ক নির্মূলে ‘মাস ডগ ভ্যাক্সিনেশন’ বা ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। কোনো এলাকার ৭০ ভাগ কুকুরকে টিকা দিলে ওই এলাকার কুকুরের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। তিন বছরে তিন রাউন্ড টিকা দিলে কুকুর থেকে মানুষ বা কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীতে জলাতঙ্ক সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৯ সালে ১৪৮ থেকে ২০১৮ সালে শতকরা ৬৮ ভাগ কমে ৪৯ এ নেমে এসেছে। টিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ হয় এই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সারাদেশে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের চাহিদা দ্বিগুণের ও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১২ সালে বিনামূল্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোগী বেশি টিকা পেয়েছে, যা ২০১৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯ এ উন্নীত হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিডিসি কর্তৃক সারাদেশে প্রায় তিন লাখ ভায়াল ভ্যাকসিন দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, মহাখালীতে প্রদান করা হয়েছে।
কুকুর/প্রাণীর আঁচড়, কামড়ের পর টিকা প্রদান করলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ হয়। কিন্তু দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল করতে হলে প্রয়োজন কুকুরকে জলাতঙ্ক থেকে নিরাপদ করা।
করণীয় কর্মকৌশলের আলোকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতি মিলিয়নে ১ জনের কম জলাতঙ্ক নির্মূল এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সহ সকল দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সহযোগী সংস্থার সাথে কাজ করছে।
জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে দেশ ব্যাপী ব্যাপকহারে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত দেশের ৬৪ টি জেলা সদর পৌরসভা ও ১০টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৬০টি জেলার সকল উপজেলায় ১ম রাউন্ড, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর,পাবনা, নীলফামারী জেলায় ২য় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় ৩য় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০ সংখ্যক কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৪টি জেলায় প্রথম রাউন্ড ও ১৬টি জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড আরো আনুমানিক ৫ লাখ কুকুরকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।