প্রচ্ছদ বিশেষ খবর মাঙ্কিপক্স নিয়ে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

মাঙ্কিপক্স নিয়ে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

0
এমপক্স

নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা কমতে না কমতেই নতুন আতঙ্কের প্রাদুর্ভাব। পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ। এমনকি যারা সম্প্রতি আফ্রিকায় ভ্রমণ করেনি, তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিরল মাঙ্কিপক্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে রোগের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন কিনেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি-

বর্তমানে কোন কোন দেশে ছড়িয়েছে?

এর আগে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার কিছু অংশে দেখা যেত। বিশেষ করে সংক্রমিত বন্য প্রাণী যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালির মাধ্যমে ছড়াত। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে ‘নাইজেরিয়া ভ্রমণে যাওয়া’ একজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে ২০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

১৯৮০ সালে নির্মুল হওয়া গুটিবসন্তের কাছাকাছি এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। তবে এর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকেনপক্সের মত। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা ও ক্লান্তি। এর ফুসকুড়িগুলো মুখে ওঠা শুরু করে, পরে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

এর লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে এবং পরের দুই থেকে ৪ সপ্তাহ তা স্থায়ী হয়। যদিও মাঙ্কিপক্সের কোনো প্রতিষেধক নেই, তবে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, এর মৃত্যুর হার হবে ৩ থেকে ৬ শতাংশ।

মাঙ্কিপক্স কিভাবে ছড়ায়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাসের ড্রপলেট এবং সংক্রমিত রোগীর ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে আসলে।

মাঙ্কিপক্সকে এর আগে কখনো যৌন সংক্রামক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে হয় তারা সমকামী নয়ত উভকামী পুরুষ। স্পেনে ও পর্তুগালের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, দেশ দুইটিতে শনাক্ত হওয়া প্রায় সকল রোগীই সমকামী। কানাডার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, শনাক্ত হওয়া প্রায় সবাই সমকামী পুরুষদের সঙ্গে জড়িত।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সির গবেষক মাতেও প্রোচাজকা মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডে বর্তমান মাঙ্কিপক্সের প্রাদূর্ভাবের ক্ষেত্রে সমকামী ও উভকামীদের যৌন নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’

একাধিক দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন তার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে যুক্ত ক্ষতগুলো মূলত পুরুষ রোগীদের যৌনাঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ফলে তারা ধারণা করছেন যৌনতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে।

মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে যা করা হচ্ছে

ডেনমার্কের ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম বাভারিয়ান নরডিক আগেই গুটিবসন্ত ও মাঙ্কিপক্সের সমন্বিত টিকা তৈরি করেছে। জেইননিওস নামের এই টিকা ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গুটি বসন্তের ক্ষেত্রে এই টিয়া দেয়ার অনুমোদন রয়েছে।

বুধবার বাভারিয়ান নর্ডিক জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১১৯ মিলিয়ন ডলারের জেইননিওস ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছে, যা ২০২৩ সালের মধ্যে দেয়া হবে। যদিও বাভারিয়ান নর্ডিকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মোট চুক্তির পরিমাণ ২৯৯ মিলিয়ন ডলার। এই চুক্তির আওতায় দেশটি প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি আরও একটি ইউরোপীয় দেশের কথা জানিয়েছে যে তারাও টিকার জন্য চুক্তি করেছে। তবে দেশটির নাম প্রকাশ করেনি বাভারিয়ান নর্ডিক।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, ভ্যাকসিনটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত এবং সমকামী পুরুষদের টিকা দেয়া যেতে পারে।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version