‘ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য অনালাইন থেকে কেনা পশু পছন্দ না হলে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া নগদ টাকার বদলে খামারিরা যাতে স্মার্ট পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করতে পারেন সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর অনলাইনে প্রচুর গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এবারও সে ব্যবস্থা চালু থাকছে। এ ছাড়া ঈদুল আজহা উদযাপন নিরাপদ করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় প্রতিটি কোরবানির হাটে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। হাটগুলোতে হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হাট পরিচালিত হবে।
‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউই হয়রানির শিকার হবেন না বলে আশা করি।’
মন্ত্রী বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে উদযাপন করা যায় সে লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ অন্য সরকারি দপ্তরগুলো কাজ করছে।
‘আগে কোরবানির পশুর জন্য পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, খামারি-উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণিসম্পদ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ খাতে উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন মাংসে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ঈদুল আজহায়’ বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে খামারিরা কোনো সমস্যায় পড়বেন না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তা-ঘাটে জোর করে নামাতে বা চাঁদা দিতে বাধ্য করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় নিশ্চিতকরণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকারের কয়েকটি দল কাজ করবে।
তিনি বলেন, পশুর মান নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি পশুর হাটে ভেটেরিনারি সার্জন থাকবেন। তারা গবাদিপশু কোরবানির উপযোগী কি না ও তাদের শরীরে নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা হরমোন প্রবেশ করানো হয়েছে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
মন্ত্রী জানান, মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন জায়গায় হাট না বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। কোরবানির পশু পরিবহনকারী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যাতে রাস্তায় পশুর গাড়ি আটকে কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয়। এজন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হবে। অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬৩৫৮ চালু থাকবে। যেকোনো প্রয়োজনে এ নাম্বারে কল দিয়ে সাহায্য নেওয়া যাবে।
‘সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সেখানে গবাদিপশুর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোরবানির সময় যাতে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে সেখানে পশু যেতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সভায় উপস্থিতি ছিলেন- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক মো. শেফাউল করিম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা।
এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।