প্রচ্ছদ বিশেষ খবর খাবার লবণে মিলছে অধিক মাত্রায় আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক : গবেষণা

খাবার লবণে মিলছে অধিক মাত্রায় আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক : গবেষণা

0
লবণ

খাবার লবণে অধিক মাত্রায় আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন একদল গবেষক। দেশের সুপার মার্কেটগুলোর নামকরা ব্র্যান্ডের লবণে পাওয়া গেছে এই আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের উপস্থিতি।

দেশে প্রথমবারের মতো লবণে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক নিয়ে এ গবেষণায় জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ দিকও উঠে এসেছে। গত ১৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা জার্নাল ‘ইনভাইরনমেন্টাল অ্যাডভান্সেস’ এ গবেষণা নিবন্ধটি ‘প্রলিফেরেশন অব মাইক্রো-প্লাস্টিক ইন কমারশিয়াল সি সল্ট ফ্রম দ্য ওয়াল্ড লংগেস্ট সি-বিচ অব বাংলাদেশ’ নামে প্রকাশিত হয়।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক, সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহমিদা পারভিন এবং একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়শ্রী নাথ ও তামান্না হোসেন।

গবেষণায় উঠে আসে, বঙ্গোপসাগর থেকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা খাবার লবণে বড় ধরনের পলিমার প্লাস্টিক যেমন পলিস্টেরিন, ইথিলিন-ভিনাইল এসিটেট, পলিথিলিন, নাইলন, পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট প্রভৃতি পাওয়া গেছে। এই আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের মাত্রা বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। লবণে এ প্লাস্টিক অনেকটা তন্তুময় এবং খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় থাকে।

দেশে প্রতি কেজি সামুদ্রিক লবণে ৩৯০ থেকে ৭৪০০ আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এসব প্লাস্টিকের মধ্যে ৫৯ শতাংশ ফাইবার আকৃতির, ৩৫ শতাংশ খণ্ডবিখণ্ড এবং ৩৮ শতাংশ স্বচ্ছ এবং ৩৫ শতাংশ নীল রংয়ের।

গবেষণায় উঠে আসে, বঙ্গোপসাগরের লবণে অতি মাত্রায় আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক থাকায় অগভীর ও তীরবর্তী এলাকায় থাকা বাদামি চিংড়ির মধ্যে প্রতি গ্রামে ৩ দশমিক ৪ ও বাগদা চিংড়িতে ৩ দশমিক ৮৭ গ্রাম আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। যা অতি খারাপ অবস্থার ইঙ্গিত করে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে পাঁচ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। অথচ দেশে এর মাত্রা গড়ে ১৩.৪ গ্রাম। এছাড়াও ভোক্তারা প্রতি বছর গড়ে লবণে থাকা ১৩০৮৮ আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক কণা ভক্ষণ করে আসছেন।

গবেষণায় বঙ্গোপসাগর থেকে পাওয়া লবণে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের হার বেশির কারণ হিসেবে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক দ্রব্যকে দায়ী করা হয়। এছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে মাইক্রো এবং ন্যানো পর্যায়ের কিছু প্লাস্টিক থাকে যা অধিক পরিমানে দায়ী। পাশাপাশি বড় মাপের প্লাস্টিক পণ্য জৈবিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভেঙে একসময় এসব মাইক্রো প্লাস্টিক তৈরি করে।

মানব শরীরে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণায় বলা হয়, আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি করে। ফলে ভোক্তার মলে প্লাস্টিকের উপস্থিতি এবং প্রদাহজনক পেটের রোগ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে ডিএনএ ক্ষতি হয়। যার কারণে হতে পারে ক্যান্সার।

এছাড়াও ভক্ষণের পর আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক দীর্ঘদিন ধরে পেটে থেকে যায়। এতে অন্যান্য ক্ষতিকর অণুজীব তার উপর বাসা বাধার সুযোগ পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব প্লাস্টিক কণা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যা হরমোন সমস্যা সৃষ্টি এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের জনপ্রিয় ১০ ব্র্যান্ডের লবণসহ ১৩ স্যাম্পল বিভিন্ন সুপার মার্কেট ও স্থানীয় দোকান থেকে সংগ্রহ করে গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। ব্র্যান্ডের ও ‘খোলা’ উভয় লবণে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। তবে খোলা লবণে আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিকের মাত্রা ব্র্যান্ডের লবণের তুলনায় অনেক বেশি।

এ বিষয়ে পাবলিক হেল্থ অ্যন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, মাইক্রো প্লাস্টিক সাধারণত হজম হয় না। এর আকার ক্ষুদ্র হওয়ায় খুব সহজে এটি কোষের মধ্যে ঢুকে যায়। এর প্রভাবে স্নায়ুবিক সমস্যার পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি।’

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘মাইক্রো প্লাস্টিকের আধিক্য দূর করতে প্রথমত প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় অধিক নজর দেওয়া দরকার। বঙ্গোপসাগরের পানিতে যেহেতু ইতোমধ্যেই অনেক বেশি পরিমাণে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তাই লবণ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিশোধনের জন্য আরও উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version