ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম
গলাব্যথায় ভোগেননি- এমন মানুষ খুবই কম। শীতকালে ঠাণ্ডা লেগে কারও কারও গলাব্যথা বেড়ে যায়। গলাব্যথা মূলত গলার প্রদাহ এবং যন্ত্রণা। এর ফলে ঢোক গিলতেও কষ্ট হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র শীত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গলাব্যথাকে বলে ফ্যারিঞ্জাইটিস। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস উভয় সংক্রমণের কারণে হতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত স্বরে ঘটে এবং উপসর্গ অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কারণে হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। এছাড়া ধূমপান, শুষ্ক বাতাস, তামাক অথবা প্রচণ্ড দূষণের কারণেও এমনটা হতে পারে।
লক্ষণ : বড় ও শিশুদের গলায় খুসখুসে ভাব হয়। এর ফলে যন্ত্রণাদায়ক অনভূতি হয়। যে কোনো কিছূ খেতেই কষ্ট হয়। কাশি হয়। গলার স্বর কর্কশ লাগে। গলার দুপাশের গ্রন্থি ফুলে যায়। গলার ভেতরে লালচে ভাব হয়, অস্বস্তিকর ফোলা ভাব দেখা দেয়। নাক দিয়ে পানি পড়ে। জ্বর, বমি, মাথাব্যথা এবং হাঁচিÑ এসব দেখা দেয়। লক্ষণগুলো যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
কখন ঝুঁকিতে থাকবেন : যদি শিশু বা বড়দের গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বেশি জ্বর আসে এবং অন্য লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তার কাছে যেতে হবে। গলাব্যথা যে কোনো বয়সী মানুষের হতে পারে। তবে ৩ থেকে ১৫ বছরের শিশুর গলার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত যে ব্যাকটেরিয়ার জন্য তাদের স্ট্রেপ থ্রোট হবে, তা হলো স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজেনাস। স্ট্রেপ সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। শিশুদের এ সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
কারণ : দূষণ, ধোঁয়া এবং ধুলোর বেশি সংস্পর্শে আসায় গলাব্যথা হয়। অ্যালার্জির কারণে গলায় ব্যথা হলে তা সারতে বেশি সময় লাগে। নাকের সংক্রমণ হাঁচি বা নিষ্কাশনের সময় গলার দিকে চলে যায়। ফলে গলায় সংক্রমণ হয়। নাক থেকে ক্ষরিত পদার্থের জন্য গলায় অস্বস্তি হয়। গলায় সুড়সুড়ি ও চুলকানির অনুভূতি সৃষ্টি করে। ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস করলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণে গলাব্যথা দেখা দেয়। বদ্ধ পরিবেশে বসবাসেও কারও কারও গলায় ব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা : ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণে ফ্যারিঞ্জাইটিস বা গলার সংক্রমণ ঘটে। স্ট্রেপ্টোকক্কসের মাধ্যমে সংঘটিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। যেসব শিশুর স্ট্রেপ সংক্রমণ হবে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে হবে। ভাইরাল সংক্রমণের কারণে গলাব্যথা হলে কোনো চিকিৎসা হোক বা না হোক, ৩-৭ দিনের মধ্যে তা কমে যায়। যদি গলাব্যথার পাশাপাশি জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করা ভালো। কখনো কখনো ফ্লু, সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা, হাম, গনোরিয়া, চিকেনপক্স, মনোনিউক্লিওসিস ও ক্রুপ হলে প্রচণ্ড গলাব্যথা হয়। এ ধরনের সমস্যায় বিশেসজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘরোয়া প্রতিকার : পর্যাপ্ত পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। হাত না ধুয়ে নিজের মুখ স্পর্শ করবেন না। খাবার ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস আলাদা রাখুন। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। গলার গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া কমাতে লবণপানিতে গার্গল করুন। এটি গলায় অবাঞ্ছিত ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে।
লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট, শ্যামলী, ঢাকা