প্রচ্ছদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ডিজেলচালিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় সর্বোচ্চ ২২ টাকা

ডিজেলচালিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় সর্বোচ্চ ২২ টাকা

0
বিদ্যুৎ

ডিজেলচালিত ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৯০ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ। তবে ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ২২ টাকা। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক। এর প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ও বাড়ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫২টি। উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট।

অন্যদিকে বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৫ পয়সা। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১০ টাকা। বড়পুকুরিয়ার কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৪ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় ৬ টাকা, সোলারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১২ টাকা। ফার্নেস অয়েলে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১২ টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে সোমবার (১৮ জুলাই) এ তথ্য জানা গেছে।

পিডিবি তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ (আমদানিসহ) ছিল সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬ টাকা ২৭ পয়সা। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় হয় হাইড্রো তথা জলবিদ্যুতে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ছিল ডিজেলে ৫৩ টাকা।

এ অর্থবছরে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল এক হাজার ২৯০ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৬০ কোটি ৭২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় তিন হাজার ২২৯ কোটি সাত লাখ টাকা। ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৫৩ টাকা ১৮ পয়সা। ২০২০-২১ অর্থবছর হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৬৫ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ১৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে মাত্র দুই টাকা ৭৯ পয়সা।

পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে সর্বশেষ যে চিত্র আছে— তাতে দেখা গেছে ডিজেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সব থেকে বেশি, ডিজেল পুড়িয়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ পেতে খরচ হয় ২২ টাকা। অন্যদিকে সব থেকে কম খরচ পড়ে জলবিদ্যুতে মাত্র ১৫ পয়সা।

দেশে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন

দেশে বর্তমানে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে প্রতি ব্যারেলে ডিজেলের মূল্য ১৪১ ডলার। প্রতি ডলার সমান ৯০ টাকা হলে এক ব্যারেলের দাম পড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। এক ব্যারেলে ডিজেল ধারণক্ষমতা ১৫৯ লিটার। ফলে এক লিটারের দাম পড়ে প্রায় ৮০ টাকা। বছরে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ১০টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের চাহিদা ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে দেশে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনকে কমিয়ে যাতে খরচ কম হয় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যাতে আমরা সহনশীল হতে পারি সেই পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ডিজেল পুড়িয়ে আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করেছি। এতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজেলের দাম বর্তমানে আকাশচুম্বি। ডিজেল ছাড়া আমাদের অন্যান্য যে বিদ্যুতের ব্যয় আছে তা কমিয়ে আনতে হবে ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশি ব্যবহার হয় গ্যাস

বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৬৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে ১০ হাজার ৮৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা মোট উৎপাদনের ৫১ শতাংশ। এরপর ৬৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করে ৫ হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়, যা মোট উৎপাদনের ২৮ শতাংশ। এছাড়া ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল পুড়িয়ে ১ হাজার ২৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ করা হয়, যা মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ। তবে ডিজেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতা ১ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট।

তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে ১ হাজার ৬৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আছে, যা মোট উৎপাদনের ৮ শতাংশ। একটি হাইড্রো বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ১ শতাংশ। আটটি সোলার পার্ক থেকে অনগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যায় ২২৯ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদনের ১ শতাংশ। ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, যা মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ। দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। খরচ কমাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব বাড়াচ্ছে সরকার। জোর দিচ্ছে প্রাকৃতিক উৎস— সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবশক্তি, শহুরে বর্জ্য ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এতে মাথায় থাকছে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টিও।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version