প্রচ্ছদ কর্পোরেট সংবাদ তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধন

তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধন

0
তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধন

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর উদ্যোগে এবং The Association of Anti Money Laundering Compliance Officers of Banks in Bangladesh (AACOBB) এর সহযোগিতায় তফসিলি ব্যাংকসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১১ এপ্রিল, ২০২৫ “হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু”, চট্টগ্রামে-এ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব ড. আহসান এইচ মনসুর প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বিএফআইইউ এর প্রধান কর্মকর্তা জনাব এ, এফ, এম শাহীনুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান জনাব সেলিম আর এফ হোসেন। এছাড়াও, শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন AACOBB এর চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, ডেপুটি হেড অব বিএফআইইউ, বিএফআইইউ এর কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণসহ বাংলাদেশে কার্যরত ৬০টি ব্যাংকের প্রধান ও উপ-প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাঁর বক্তব্যে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য বিভিন্ন সরকারী সংস্থা সমন্বিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিটেন্স প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থ পাচার হ্রাসের প্রতিফলন। অর্থ পাচার হ্রাস ও সংকোচনশীল মুদ্রানীতির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগের রেট অব রিটার্নসহ সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হলে তা মুদ্রা পাচার রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মূল কারণ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ঘাটতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান যে, যেসকল ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছে তারাই এখন দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে অগ্রগামী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে হয়তো দেশের ব্যাংকিং খাতে এরূপ সংকট সৃষ্টি হতো না। বর্তমান সরকারও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।

AACOBB এর চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ জিয়াউল এইচ মোল্লা নির্ভয়ে এএমএল/সিএফটি কমপ্লায়েন্স জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান জনাব সেলিম আর এফ হোসেন তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রযুক্তিভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনে ঘাটতি দুরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিএফআইইউ এর প্রধান কর্মকর্তা জনাব এ, এফ, এম শাহীনুল ইসলাম তার বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ন্ত্রিত ঋণপ্রবাহ, খেলাপি ঋণের হার বৃদ্ধি, ঋণ জালিয়াতি, কর্পোরেট সুশাসনের অভাব এবং অর্থ পাচার ও হুন্ডির ভয়াবহতার ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যালান্স অব পেমেন্টসহ সামষ্টিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিগত ও সময়োপযুক্ত উদ্যোগের ফলে ইতোমধ্যে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাঁর বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন ঝুঁকিমুক্ত একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়। পাশাপাশি আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কর্পোরেট সুশাসনের ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তিনি আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ব্যাংকের এএমএল/সিএফটি পরিপালন ব্যবস্থা ও মনিটরিং জোরদারকরণে ব্যাংকগুলোকে উদাত্ত আহবান জানান। এছাড়াও, আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স ও ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কার টাস্কফোর্সসহ সকল অংশীজনের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অর্থ পাচার রোধসহ অর্থনীতিতে সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, আলোচ্য সম্মেলনে ব্যাংকিং খাতে সংকট উত্তরণে কর্পোরেট খাতের অপব্যবহার প্রতিরোধ ও অর্থ পাচার রোধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভূমিকা, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ হুন্ডি, অনলাইন গেমিং/বেটিং/ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনসহ মানিলন্ডারিংয়ের নতুন নতুন ধরণ এবং তা প্রতিরোধের কৌশল বিষয়ক অপর সেশনসমূহে বিষয়ভিত্তিক সমস্যার ধরণ ও তা মোকাবেলার কলাকৌশল বিষয়ক আলোচনা করা হয়।

 

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version