দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলওয়ে সেতুর উদ্বোধন হবে মঙ্গলবার। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
মাত্র সাড়ে ৩ মিনিটেই রেল সেতু অতিক্রম করবে ট্রেন। সেতুটি ডাবল লেনের হলেও প্রথমে সিঙ্গেল লেন চালু হওয়ায় সেতুটির পুরোপুরি সুফল সহসাই পাবেন না যাত্রীরা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডাবল লেনের রেললাইন তৈরি করা হবে। এর ফলে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানের ওপর অত্যাধুনিক স্টিল প্রযুক্তির অবকাঠামোতে নির্মিত ডাবল লেনের সেতুটি জানান দিচ্ছে বাংলাদেশর সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রার কথা। উদ্বোধন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়েছে রেলপথ বিভাগ।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম এটির উদ্বোধন করবেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, সেতুর পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম প্রান্তের সয়দাবাদ রেল স্টেশন পর্যন্ত উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা যমুনা রেল সেতু অতিক্রম করবেন।
এরপর ১১টা ৪০ মিনিটে সয়দাবাদ রেল স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন হবে। দুপুর ১২টায় ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন পূর্ব প্রান্তে ফিরে যাবে ট্রেন।
এ বিষয়ে সেতুর পশ্চিমপাড় ইব্রাহিমাবাদ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহীন মিয়া বলেন, সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের দিন থেকে প্রথম পর্যায়ে সেতু নিয়ে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ মিনিট। এর আগে যমুনা সেতু দিয়ে ট্রেন পাড়ি দিতে ২০ মিনিট সময় লাগত।
১২ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “যমুনা রেল সেতু দিয়ে ট্রেন পারাপারে আগের তুলনায় কম সময় লাগবে। এতে দুই পাড়েই সময় সাশ্রয় হবে। ডাবল লেনের সুবিধা পেতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।”
রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, রেল সেতুতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে রেল সেতুতে পরবর্তিতে রং করার প্রয়োজন হবে না। ৪.৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ সেতুটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করবে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতে থাকে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে নয় হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা করা হয়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করেন। অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’টির নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেল সেতু’ নামকরণ করা হয়।
রেল মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগে যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করলেও নতুন সেতু দিয়ে ৬৮টি ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।