নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সাংবিধানিক না অসাংবিধানিক, এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই শুরু হতে চলেছে। বিলের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে ভারতের মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)। দলের চার সাংসদ পি কি কুনহালিকুট্টি, ই টি মহম্মদ বশির, আবদুল ওয়াহাব, কে নভস কানি-সহ একাধিক নেতা তাদের আবেদনে অভিযোগ করেছেন, বিলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশেন ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে।
মুসলিম লিগের বক্তব্য, বিল সংবিধানের মূল ভাবনার বিরুদ্ধে। সংবিধান বলে, সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। কিন্তু এই বিলে ছয়টি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বললেও মুসলিমদের বাদ দেয়া হয়েছে। তাই এই বিল সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
বিলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে চলেছে আরেক ইসলামিক সংগঠন জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ। দলের প্রধান সৈয়দ আরশাদ মাদানি সংসদে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন। মাদানি বলেছেন, বিলটি স্পষ্ট ভাবে সংবিধানের ১৪ ও ১৫তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে।
অনুচ্ছেদগুলোয় বলা আছে, দেশের কোনও নাগরিককে ধর্ম, জাতি, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না। আইনের চোখে সব নাগরিক সমান। কিন্তু এই বিল ধর্ম ও সংস্কারের ভিত্তিতে তৈরি।
কংগ্রেসসহ আরো বেশকিছু বিরোধী দলও সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আদালতে লড়াই হওয়ার ব্যাপারটি আগ থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল। গত জানুয়ারিতেই আসামের বিশিষ্টজনেরা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এক আবেদনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সে সময়ই জানিয়েছিল, সংসদে বিল পাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিচার হবে।
বিল নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত কী রায় দেবেন তা নিয়ে আলোচনা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে। ভারতের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজি মনে করছেন, এই বিল সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যেতে পারে। তবে আরেক সাবেক সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে অবশ্য বলেছেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র কী করতে পারে না। কেউ বলতে পারেন, আরো উদার হয়ে সরকার আরো মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে পারতো। তবে তাই বলে অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়া সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী হতে পারে না। সরকারি আইনজীবীদের যুক্তি, তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মুসলিমরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার নন। তাই ১৪তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠছে না। তারা আরো জানায়, সংবিধানের ১৫তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের প্রশ্নও উঠছে না। কারণ, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ধর্ম, জাত, লিঙ্গ, জন্মস্থানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে ভেদাভেদ করতে পারে না। এই বিলটি যারা ভবিষ্যতে নাগরিক হবেন, তাদের জন্য। তাই ১৫তম অনুচ্ছেদ খাটে না।