প্রচ্ছদ শিল্প বানিজ্য অর্থনীতি নির্মাণসামগ্রীর প্রধান উপকরণ রড-অ্যাঙ্গেল-প্লেটের দাম আকাশছোঁয়া

নির্মাণসামগ্রীর প্রধান উপকরণ রড-অ্যাঙ্গেল-প্লেটের দাম আকাশছোঁয়া

0

নির্মাণসামগ্রীর প্রধান উপকরণ রডের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দফায় দফায় বেড়ে এ পণ্যের দাম এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। রডের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়ানো হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কী কারণে দাম বেড়েছে তা জানেন না তারা। লকডাউনের পর দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে রডের বাড়তি দাম দেখা যাচ্ছে।

নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে আবাসন খাতে। অর্থনৈতিক মন্দা, কার্যক্রম বন্ধ, নতুন গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এ সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের দামও কিছুটা বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলে ফ্ল্যাটের দামও কমে বলে জানিয়েছেন তারা।

লকডাউনে দোকান বন্ধ ও অন্যান্য কার্যালয়ের কার্যক্রম অল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় অনেকটা নীরবে রডের দাম বাড়তে থাকে। যে রডের দাম তিন মাস আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা টন, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।

রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চের দিকে রডের দাম বাড়ে আকাশছোঁয়া। এরপর গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন হলে দাম কমে আসে। প্রতি টন বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। আবারও লকডাউনে দোকান বন্ধ ও অন্যান্য অফিসের কার্যক্রম অল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় অনেকটা নীরবে রডের দাম বাড়তে থাকে। যে রডের দাম তিন মাস আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা টন, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।

রডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে মোটা প্লেট, পাতলা প্লেট ও অ্যাঙ্গেলের। তিন মাস আগে মোটা প্লেটের টন বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজারে, এখন তা ৫০ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকায়। পাতলা প্লেট ৮৫ হাজার টাকা টন বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। টনপ্রতি ২০ হাজার টাকা বেড়েছে অ্যাঙ্গেলের। এক টন অ্যাঙ্গেল ৫৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল মাস তিনেক আগে, এখন তা প্রায় ২০ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ হাজার টাকায়।

এর আগে ওয়ান-ইলেভেনের (২০০৭ সালের জানুয়ারির পর) সময় দেশজুড়ে অনিয়শ্চয়তার মধ্যে ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) এক টন রডের দাম ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে। এটাই দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত রডের সর্বোচ্চ দাম ছিল। পরে রডের দাম কমে ৪৫ হাজার টাকায় নেমে আসে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে না কি দাম বেড়েছে। তাহলে লকডাউনের এ সময় কেন দাম বাড়লো, যখন দোকান বন্ধ ছিল? আমার মনে হয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়েছে। আমরা শুধু তাদের কাছ থেকে মাল কিনে বিক্রি করি, তারা যে দাম রাখে সে দামেই বিক্রি হয়। এর আগেও দাম বেড়েছিল, আবার কমেও গিয়েছিল।

হঠাৎ কেন রড, লোহার প্লেট ও অ্যাঙ্গেলের দাম বাড়লো এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে। রাজধানীর ইংলিশ রোডে রড কিনতে আসেন কেরানীগঞ্জের হাবিবুর রহমান প্রিয়াস। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে বাড়ির কাজ ধরতে পারিনি। তখন ব্যাংক লোনের জটিলতা ছিল, লেবার সংকট ছিল। এখন রড কিনতে এসে ধরা খেয়েছি মনে হচ্ছে। দাম অনেক বেড়েছে। দাম বাড়া নিয়ে খুচরা দোকানিরা কিছু জানেন না বলছেন। তাদের অনেকেই বলছেন, বিশ্ববাজারে নাকি রডের দাম বাড়তি; তাই দেশের বাজারেও বেড়েছে। এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়লে বাড়ি করা কষ্টকর, ফ্ল্যাট বিক্রি করে ব্যাংক লোনের টাকা পরিশোধ হবে না।’

রড, প্লেট ও অ্যাঙ্গেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া নিয়ে কথা হয় ঢাকা আয়রনের স্বত্বাধিকারী শরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি  বলেন, ‘কেন দাম বাড়লো এ প্রশ্ন আমারও। কঠোর লকডাউনের সময় দোকান বন্ধ ছিল। এখন দোকান খুলেছি, হঠাৎ দেখি দাম আকাশছোঁয়া। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে না কি দাম বেড়েছে, এটুকুই আমি বলতে পারি।’

এ বিষয়ে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টের পরিচালক আরশাদ হোসেন আসাদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে না কি দাম বেড়েছে। তাহলে লকডাউনের এ সময় কেন বাড়লো, যখন দোকান বন্ধ ছিল? আমার মনে হয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়েছে। আমরা শুধু তাদের কাছ থেকে মাল কিনে বিক্রি করি, তারা যে দাম রাখে সে দামেই বিক্রি হয়। এর আগেও দাম বেড়েছিল, আবার কমেও গিয়েছিল।’

একই ধরনের কথা বলেন রাজধানীর ইংলিশ রোডের রড, প্লেট, অ্যাঙ্গেল বিক্রেতা উত্তরা আয়রন, মেরাজ স্টিল, সিরাজ উদ্দিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, রাহাত স্টিল, দুই ভাই আয়রন ও ফাইভ স্টারের ম্যানেজার ও পরিচালকরা।

অন্যদিকে আবাসন ব্যবসা মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণের মাধ্যমে দেশের আবাসন সমস্যার সমাধান যেমন করছে, তেমনি কর্মসংস্থানসহ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে। লিংকেজ শিল্প বিকাশে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত অবকাঠামো বিনির্মাণ হচ্ছে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। কিন্তু করোনার কারণে গত ছয় থেকে সাত মাসে আবাসন খাতে বিক্রির পরিমাণ ৬০ শতাংশের মতো কমে গেছে। উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্প গ্রহণের হারও কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো।

তাছাড়া এ খাতের এখন নতুন সংকট নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। এ নিয়ে কথা হয় রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের কারণে ভালো সেল হয়েছে গত বছর। কিন্তু লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে তারা ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। করোনাভাইরাসের কারণে আবাসন খাতে বিক্রি কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আবাসন খাতে বহুমুখী সংকট তৈরি হয়েছে। রাজউকে অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ চলায় প্ল্যান পাস সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে। সেখানে অনেক সময় ফাইল আটকে থাকছে। এতে কাজ এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। নতুন সংকট নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। এখন নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে অনেক। স্থানের ওপর ভিত্তি করে কিছুটা দাম বেড়েছে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের। রডসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম কমলেও ফ্ল্যাটের দামও কমে আসবে।’

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version