বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর শীতকালীন সবজি। সবুজ বাঁধানো পাতার এই সবজিটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই সবারই এই সময় বাঁধাকপি খাওয়া উচিত।
কেন খাওয়া উচিত, সেটা বুঝতে হলে এর দশটা উপকারিতার কথা জানতে হবে।
ভিটামিনের ভান্ডার
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে রয়েছে। ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। আর ভিটামিন কে হাড় মজবুত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি উন্নত করে
বাঁধাকপিতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিঙ্গেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের ড. হান্স ডি ব্রুন মন্তব্য মনে করেন, ‘আমরা বাঁধাকপি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছি। সেই গবেষণের ফল বলছে বাঁধাকপির উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং ভিটামিন সি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এটি মাইক্রোবায়োম বা জীবাণু ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক।
ফলে দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।’
ওজন কমাতে সহায়ক
বাঁধাকপি কম ক্যালোরি এবং বেশি ফাইবারযুক্ত। তাই এটা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে ওজন কমানোর ডায়েটে এটি অত্যন্ত কার্যকরি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বাঁধাকপিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
বাঁধাকপিতে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ
বাঁধাকপিতে আরও আছে সালফার যৌগ—এটা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস বা মুক্তমূলক দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁধাকপি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
বাঁধাকপির ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি ক্ষত সারায়, ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। এটা ত্বকের বলিরেখা কমায় এবং ত্বকের কোষগুলোর পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বিও পর্যপাত পরিমাণে আছে বাঁধাকপিতে। এগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। এটা ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগ দূর করতেও সাহায্য করে। ফলে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে বাঁধাকপি বড় ভূমিকা রাখে।
হাড় মজবুত করে
ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম থাকার কারণে বাঁধাকপি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়ক। এটা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।
প্রদাহ কমায়
বাঁধাকপিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আছে, এগুলো শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। বড় ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস, ড. ক্যাথরিন ম্যাকওয়াল্টারস বলেন, ‘বাঁধাকপি হলো গ্লুকোসিনোলেট সমৃদ্ধ সবজি। গ্লুকোসিনোলেট শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁধাকপিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে বেগুনি বাঁধাকপি হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।’
বাঁধাকপি শুধু খাবারের স্বাদ যেমন বাড়ায়, তেমনি এটা শরীরকে সুস্থ রাখতেও ভূমিকা রাখে। এটা সহজলভ্য এবং স্বল্পমূল্যের একটি পুষ্টিকর খাবার। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি অন্তর্ভুক্ত করুন।