দুর্নীতির টাকা নিরাপদ রাখতে নামে-বেনামে সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে বেশকিছু শর্ত আরোপ করে সরকার। এ কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যায়। এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখায় সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মূল্যস্ফীতির তুলনায় আমানতের সুদহার কম থাকায় আবার সঞ্চয়পত্রেই ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৬৭ শতাংশ। আর ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসে যা ছিল ১০ লাখ ৭১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে ১১.৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট আয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ে যা ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ৬৭.৫০ শতাংশ। গত বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ার পর নতুন অর্থবছরের শুরুতেই তা ব্যাপকহারে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। সাধারণ সঞ্চয়কারীরা পাচ্ছেন আরও কম সুদ, মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ। আবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি, সবচেয়ে নিরাপদও। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। আমানতের সুদহারের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি। যদি মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের সুদ কম হয়, তা হলে ব্যাংকে আমানত রাখা মানে টাকা কমে যাওয়া। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ এখন ব্যাংকে আমানত রাখা তো কমিয়ে দিচ্ছেই, আগামীতে আরও কমিয়ে দেবে। তারা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশন, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি নামে কয়েক ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার। এর বাইরে রয়েছে প্রবাসীদের জন্য ৪টি বন্ড। এসবের সুদহার ১০ থেকে ১১.২৮ শতাংশ পর্যন্ত; যা ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নিট বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি আরও বেশি। জুলাইয়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার। এর থেকে আগে বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পরিশোধের পর নিট অংশ পাওয়া যায়। জুলাইয়ে সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের জুলাইয়ে মোট বিক্রি ছিল ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিক্রি সাড়ে ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।