প্রচ্ছদ আবাসন বৈষম্যমূলক ড্যাপে অর্থনীতে স্থবিরতা, জরুরী পদক্ষেপ চায় আবাসন ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির...

বৈষম্যমূলক ড্যাপে অর্থনীতে স্থবিরতা, জরুরী পদক্ষেপ চায় আবাসন ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ

0
ড্যাপ

বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-৩৫) নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে গৃহায়ন খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনগুলো। ড্যাপের কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছেন বলে মনে করছেন তারা। এ খাতে গতিশীলতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লিংকেজ শিল্পের নেতৃবৃন্দ। আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির স্থবিরতা হতে উত্তরণের লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এর নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায়, ইলেকট্রানিক ইকুইপমেন্ট এ্যান্ড সিকিউরিটি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ নিয়াজ আলী চিশতি, বাংলাদেশ এলিভেটর এক্সেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট এমদাদ উর রহমান, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট, মোঃ হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ক্যাবলস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এর সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন ঢালী, বাংলাদেশ টিম্বার ইমপোর্টাস এ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন এর ট্রেজারার তানভীর মোহাম্মদ দিপু উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন রিহ্যাব এর পরিচালক ও প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্।

রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, নতুন ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে আবাসন খাতে মারাত্মক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগ কমেছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

লিংকেজ শিল্পের নেতৃবৃন্দ বলেন, ড্যাপ অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা ও আয়তন সীমিত হওয়ায় জমির মালিকরা আর জমি ডেভেলপারদের হাতে দিতে রাজি হচ্ছেন না। এতে করে নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে না, ফলে আবাসন খাতসহ এর সঙ্গে জড়িত ২০০টির বেশি লিংকেজ শিল্প– যেমন রড, সিমেন্ট, ইট, কেবল, রং, টাইলস, লিফট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, স্যানিটারি সামগ্রী ইত্যাদির বাজারে মারাত্মক মন্দাভাব চলছে।

রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই শিল্পে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান এবং প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবিকা জড়িত। অথচ রডের চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অস্থায়ী সরকার হলেও আবাসন খাত ও সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ খাত সচল না হলে জাতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দেশের উন্নয়ন থমকে দিতে পারে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, আবাসন খাত ভালো থাকলে আমাদের সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পগুলো স্বাভাবিকভাবেই ভালো থাকার কথা কিন্তু আমরা ভালো নেই। কারণ লিংকেজ শিল্পগুলোর সব শেষ ফিনিস প্রোডাক্ট এর বেশির ভাগ ক্রেতা ডেভেলপাররা। বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ আবাসন শিল্প মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লিংকেজ শিল্পগুলোর উপর। লিংকেজ শিল্পগুলোর পণ্যের চাহিদাও ব্যাপকভাবে কমে গেছে। রড এর চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। একই ভাবে চাহিদা কমেছে সিমেন্ট, ইটসহ অন্যান্য উপকরণের।

রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার আবাসন সংশ্লিষ্ট লিংকেজ কোম্পানিতে ৩৫০ জন লোক ছিল কিন্ত বর্তমানে ৭৫ কর্মী রয়েছে। বাকি কর্মি ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ক্যাবলস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এর সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ আকতার হোসেন ঢালী বলেন ৯৮% শতাংশ কেবল আমরা দেশে উৎপাদন করি ২শতাংশ আমদানী করি।কিন্তু আবাসন প্রকল্প কমে যাওয়াতে তাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ এলিভেটর এক্সেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট এমদাদ উর রহমান বলেন বিল্ডিং এর উচ্চতা কমে যাওয়াতে লিফঠ এর চাহিদা একেবারে কমে গেছে। তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার জন্য অবশ্যই আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির স্থবিরতা হতে অতিদ্রæত উত্তরণ ঘটাতে হবে। সরকারের এ ব্যাপারে একটা ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version