করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। যা গেল অর্থবছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। বুধবার (২২ জুলই) নতুন অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ।
নীতিমালায় বলা হয়,করোনা অতিমারির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষক বান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবারের কৃষি ঋণ নীতিমালার প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন,ক্ষুধা মুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন।
চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি।
কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ঋণ বিতরণ করবে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে। তবে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়েও সচল ছিল কৃষি খাতের উৎপাদন। তাই অতিমারিতে ঋণ বেশি প্রয়োজন ছিল কৃষকের। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণ সহায়তার দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মোট ৩০ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৬ জন কৃষি ও পল্লী¬ ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন নারী প্রায় ৮ হাজার ৩৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। আলোচ্য সময়ে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৮ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৭ হাজার ১৭৯ জন কৃষক প্রায় ২১ কোটি ২১ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও
কর্মসূচিতে বেশ কিছু সময়োপযোগী বিষয় যুক্ত করেছে কেন্দ্রী ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে: গয়াল ও তিতির পাখি পালনের জন্য ঋণ প্রদান এবং এ সংক্রান্ত ঋণ নিয়মাচার সংযোজন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঋণ প্রদান। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর আওতায় গরু মোটাতাজাকরণে ঋণ প্রদান। ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ফসলের ঋণ সীমা বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কীম পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় তৈল ও মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা ছাড়াও শস্য এবং ফসল খাতে স্বল্প সুদে (৪ শতাংশ হারে) কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ জুড়ে বিদ্যমান থাকবে।
তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক ৩০ জুন পর্যন্ত পুনঃঅর্থায়ন স্কীমের আওতায় প্রায় ১৭২ কোটি টাকা এবং সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে ২৮৬ কোটি কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রিয় ব্যাংক।