প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল মুখে দুর্গন্ধ ও তার প্রতিকার পেতে আপনার করণীয়

মুখে দুর্গন্ধ ও তার প্রতিকার পেতে আপনার করণীয়

0
মুখের দুর্গন্ধ

মুখে দুর্গন্ধ জনিত বিরক্তিকর সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। এটি লোকসমাজে কথা বলার সময় আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। আপনার প্রিয়জনও আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ও মুখের পরিচর্যা না করলে দুর্গন্ধ হতে পারে। আবার মুখ গহ্বরের রোগের কারণেও এমনটি হতে পারে।

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের পেরিওডন্টোলজি ও ওরাল প্যাথলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. অনুপম পোদ্দার।

কেন মুখে দুর্গন্ধ হয় :

* দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকা।

* মুখের থুথু কমে যাওয়া। মুখে থুথুর পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়াগুলোর দ্রুত প্রজনন হয়ে থাকে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়।

* যেসব খাবার মুখের পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, সেগুলো বেশি খাওয়া।

* তুলনামূলক কম পানি পান করা।

* নিয়মিত নিয়মমতো মুখ ও দাঁতের পরিচর্যা না করা।

* কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা যেমন- নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, লিভারের সমস্যা, টনসিলজনিত সমস্যা ইত্যাদি।

* মুখ ও দাঁতের অসম্পূর্ণ চিকিৎসা।

* মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাসগত সমস্যা।

* করোনাকালীন মাস্ক ব্যবহারের কারণে।

* দীর্ঘ সময় কিছু না খাবারের কারণে ও জিহ্বা পরিষ্কার না করার কারণে জিহ্বার উপর সালফারের প্রলেপ পড়ে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

করণীয়-

* দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে।

* ফলমূল, শাকসবজি, দইজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত।

* লেবু, জাম্বুরা, কমলা, কামরাংগা, মাল্টা ও আনারসের শরবত পান করা।

* গাজর, শসা, টমেটো, আমড়া ও আমলকি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা।

* মুখ ও দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করা।

মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে খাবারের পর ৩০-৬০ মিনিট আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, ব্রাশ করার জন্য যেন প্রাকৃতিক উপায়ে থুথুর মাধ্যমে খাদ্য পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে ও মুখের নরমাল PH বহাল থাকে। খাবারের পরপরই মুখের PH এসিডিক থাকে, খাবার পর থুথু প্রথম মুখের PH নরমাল করে। তাই খাবারের পরপরই দাঁত ব্রাশ করার ফলে এনামেলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপরদিকে এসিডিক PH -এ ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন হার বেশি।

* অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল মাউথ ওয়াশ যেমন- ০.২ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন অথবা ০.৫ শতাংশ পভিডোন আয়োডিন প্রতিদিন ৩ বার, ২ চামচ ৩০ সেকেন্ড ধরে প্রতিবার কুলকুচি করতে হবে। গোলাপ জল দিয়ে গার্গল করা যেতে পারে।

* প্রতি রাতে ১ বার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।

* মেনথল গাম ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া যেতে পারে।

* অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, টনসিলের সমস্যা, লিভারের সমস্যা এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা করা।

* নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করা।

* মুখ ও দাঁতের অসম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পন্ন করে নেওয়া, যাতে খাবার না জমতে পারে।

* বর্তমানে কোভিড-১৯জনিত কারণে যেহেতু সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হয়, এজন্য মুখ দিয়ে সবাইকে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই সিডিসি গাইডলাইন অনুযায়ী, ৪ ঘণ্টা পরপর মাস্ক পরিবর্তন করতে হবে। পুনরায় ব্যবহারকৃত মাস্কগুলো ৪ ঘণ্টা পর প্লাস্টিকের ডাস্টবিনে রাখতে হবে পরে ধুয়ে পরতে হবে। রুমে একা থাকার সময় মাস্কবিহীন থাকা ভালো।

* মাছ অনেক সময় দুর্গন্ধের কারণ হয়। তাই মাছের উপর লেবুর রস দিলে দুর্গন্ধ মুক্ত হয়।

বর্জনীয় –

* কফি ও অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার যেমন- প্রসেস করা মাংস, সসেচ, লবণাক্ত বাদাম ও চিপস এগুলো রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয় ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এটি বর্জন করতে হবে।

* পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ ইত্যাদি খাদ্যের মধ্যে যে কেমিক্যাল থাকে তা রক্তবাহিত হয়ে প্রথমে ফুসফুসে আক্রমণ করে পরে তা প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে গন্ধের সৃষ্টি করে।

* ধূমপান পরিহার করতে হবে।

* অত্যধিক ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত।

* রিফাইন কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার যেমন- চিনি, সাদারুটি, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কিট ইত্যাদি না খাওয়া ভালো কারণ এটি ব্যাকটেরিয়ার প্রজননের উত্তম মাধ্যম ও এটি ৩-৪ ঘণ্টার বেশি Hunger Control করতে পারে না।

* খাবার সোডা ও কার্বোনেটেড ফলের রসে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে তাই এগুলো পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।

* মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস বর্জন করতে হবে।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version