বেতন-ভাতা (মাইলেজ) সংক্রান্ত দাবি মেনে না নেওয়ায় সারাদেশে ধর্মঘট পালন করছেন ট্রেন চালকরা। বুধবার (১৩ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে তারা সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছেন। রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত মাস্টার আফসার উদ্দিন।
তিনি বলেন, রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ড্রাইভাররা ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দেশের সব জায়গায় একযোগে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সমাধান হলে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
এ সময় কমলাপুর রেলওয়ের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনিবার্য কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কখন ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না। কেউ চাইলে টিকিট ফেরত দিয়ে কাউন্টার থেকে টাকা নিতে পারেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সোসাইটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সকাল থেকে যেসব ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সেগুলো ছেড়ে যায়নি। গত রাত থেকেই চালকসহ রানিং স্টাফরা সংশ্লিষ্ট কাজে বিরতি দিয়েছে।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। হুট করে ট্রেন চলাচল বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে আগত যাত্রীরা।
সকাল সাড়ে ৯টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে আন্দোলনকারীরা তার সঙ্গে দেখা করেনি। তারা রেলস্টেশনের লোকমোটিভে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।
এরপর সাড়ে ১০টায় লোকোমোটিভে যান রেলওেয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
জানা গেছে, রেলের চাকা সচল রাখতে একজন চালককে দিনে গড়ে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা ট্রেন চালাতে হয়। এজন্য তাদের বাড়তি মজুরি ও পেনশনে ৭৫ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়। বেতনের বাইরেও যত মাইল দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, তার জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাতা পেয়ে থাকেন তারা। এটা রেলে ‘মাইলেজ ভাতা’ হিসেবে পরিচিত।
এর আগে মাইলেজ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচিতে যায় রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। পরে (৩০ জানুয়ারি) রেলভবনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মসূচি স্থগিত করে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া আশ্বাসগুলোর মধ্যে ছিল- পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা আগের মতো বহাল রাখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া। এছাড়া গত বছরের ৩ নভেম্বরের আগে যেসব রানিং স্টাফ অবসরে গেছেন তাদের আগের নিয়ম অনুযায়ী পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কিন্তু গত ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর রেলওয়ের রানিং স্টাফরা আজ এ ধর্মঘটে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বেসামরিক পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সাথে কোনো ভাতা যোগ করে হিসাব করার সুযোগ নেই। তাই রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মূল বেতনের সাথে চলমান ভাতা যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদানের প্রস্তাবে নির্দেশক্রমে পুনরায় অর্থ বিভাগের অসম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।