সোনার দাম দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে। এতে দেশের বাজারেও দফায় দফায় বেড়েছে দামি এই ধাতুটির মূল্য। এরইমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে এক ভরি সোনার দাম ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে শিগগির দেশের বাজারে আরও এক দফা সোনার দাম বাড়তে পারে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দেশের বাজারে সর্বশেষ দাম বাড়ার পর এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫০ ডলারের ওপরে বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। এ কারণে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাজুস।
যোগাযোগ করা হলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূইয়া লিটন বলেন, গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম অনেক বেড়ে গেছে। বিষয়টি আমরা দেখেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়াতে হবে। শিগগির আমরা বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
হঠাৎ দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার এমন দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে সোনার দাম বাড়ে। সাধারণত অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সোনার দাম বেশি বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর আমাদের দেশে সোনার দাম বাড়ার কারণ ডলারের দাম বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্য বৃদ্ধি।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দেশের বাজারে সবশেষ সোনার দাম বাড়ানো হয়। সোনার পাশাপাশি সে সময় বাড়ানো হয় রুপার দাম। তার আগে গত বছরের ৩০ ও ৪ ডিসেম্বর এবং ১৮ ও ১৩ নভেম্বর সোনার দাম বাড়ানো হয়। এভাবে দফায় দফায় দাম বাড়ানোর কারণে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে উঠে গেছে সোনা।
গত ৮ জানুয়ারি সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯০ হাজার ৭৪৬ টাকা করা হয়। এর আগে দেশের বাজারে কখনো এক ভরি সোনার দাম ৯০ হাজার টাকা হয়নি।
ভালো মানের সোনার পাশাপাশি বাড়ানো হয় সব ধরনের সোনার দাম। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৬০৫ টাকা করা হয়। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯২৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭৪ হাজার ২৪১ টাকা। এছাড়া সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৬১ হাজার ৮৭৮ টাকা করা হয়।
সোনার পাশাপাশি বাড়ানো হয় রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১৯৯ বাড়িয়ে এক হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১৯৮ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৬৩৩ টাকা করা হয়। এছাড়াও ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ১৭৫ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১১৭ টাকা বাড়িয়ে ভরি এক হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে সোনা ও রুপা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, দেশের বাজারে সোনার দাম বড়ানোর পর গত এক সপ্তাহে বিশ্বাবাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৫০ ডলার। এতে এক আউন্স সোনার দাম বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৯২০ দশমিক ২৯ ডলার। গত বছরের ২১ এপ্রিলের পর বিশ্ববাজারে সোনার এতো দাম আর হয়নি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সোনার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত বছরের ৩ নভেম্বর এক আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৬২৯ দশমিক ১৫ ডলার। সেখান থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন এক হাজার ৯২০ দশমিক ২৯ ডলার হয়েছে। অর্থাৎ দুই মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ২৯১ দশমিক ১৪ ডলার।