সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সময় একজন নারীকে সহ্য করতে হয় অনেক কষ্ট। গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম বড় সমস্যা হল ঘুমাতে এসে বিছানায় আরাম না পাওয়া। গর্ভাবস্থায় পেট ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, শরীরের হরমোনগুলোর ক্ষরণ বেড়ে যায়, ফলে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
এ ছাড়া পেটের আকার বাড়ায় চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের ওপর। কোমর ও পিঠের ব্যথাও বাড়ে এ সময়। সব মিলিয়েই কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় শুয়ে থাকার বেশ কিছু কৌশল রয়েছে।
চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কীভাবে শোয়া বা ঘুমানো উচিত:
চিৎ বা উবু হয়ে শোবেন না: আপনি হয়তো আপনি চিৎ বা উবু হয়ে শুয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় তা একেবারেই করা যাবে না। বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্টরা বলেন, একজন গর্ভবতী নারী যখন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন, তখন তার মেরুদণ্ড ও কোমরের হাড়ে অত্যন্ত চাপ পড়ে, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে রিলাক্সিন হরমোন ক্ষরিত হয়, যা বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলের টেনডনকে আলগা করে দেয়। ফলে এই সময় তাদের হাড় যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। পেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এই দুর্বল হাড়গুলোতে অত্যধিক চাপ পড়ে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেই, যন্ত্রণা বাড়লে ঘুমও আসে না সহজে।
পাশ ফিরে শোওয়ার অভ্যাস করুন: গর্ভাবস্থায় পাশ ফিরে শুয়ে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পাশ ফিরে শুয়ে থাকলে আপনার কোমর ও পিঠের হাড়ে কোনোরকম চাপ পড়বে না। হৃৎপিণ্ডের রক্তসঞ্চালনে তাই কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না। পাশ ফিরে শোওয়ার আরেকটি ভালো দিক হলো নিঃশ্বাসের সমস্যা না হওয়া।
চিকিৎসকরা বলেন, বাম দিকে ফিরে শুয়ে থাকা সব থেকে ভালো এবং এতেই সবচেয়ে আরামে ঘুমানো সম্ভব। কারণ আমাদের লিভার থাকে ডানদিকে, বামদিক ফিরে শুলে লিভারের ওপর চাপ পড়ে না, এতে খাদ্যনালীর সিস্টেম যেমন ঠিকঠাক কাজ করে, তেমনই ঘুমের ক্ষেত্রেও এনে দেয় আরাম।
এদিক-ওদিক ফেরা যাবে না: গর্ভাবস্থায় ঘুমের অসুবিধার কারণে অনেকেই এদিক ওদিক ফিরে নিজের সবচেয়ে কমফোর্ট জোনকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে অহেতুক চাপ পড়ে হাড় ও হাড়ের জয়েন্টে। অনেকেই ঘুমের মধ্যে এদিক ওদিক ফিরতে বা শুয়ে থাকার ভঙ্গি বদল করতেই অভ্যস্ত। এমনটা করলে নিজের অজান্তেই রক্তসঞ্চালনে সমস্যা তৈরি হতে পারে, নিঃশ্বাসের সমস্যায় ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এমনকি বাড়তে পারে কোমর ও পিঠের যন্ত্রণা।
তাই চিকিৎসকরা বলেন, যেদিক ফিরেই শুয়ে থাকেন, পিঠের দিকে যেন একটি বালিশ রাখা থাকে। এটি থাকলে সহজে শোওয়ার ভঙ্গি বদলানো অসম্ভব। অনেক নারীরাই বলছেন পাশ ফিরে শুয়ে পা ভাঁজ করে দুপায়ের ফাঁকে একটি বালিশ রাখলে ভালো ঘুম হয়। এ ছাড়া পাশ ফিরে শুয়ে পেটের নিচে একটি বালিশ নিয়ে শুয়ে থাকতেও অনেক আরামবোধ করেন।