বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ পুনর্বহালের দাবিতে রাজউক ঘেরাও কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে ঢাকার জমি মালিকরা। ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশন এর পক্ষে মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল সোয়া ৯টা থেকে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তাদের পক্ষে সহমত জানাতে ভূমি মালিক, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার ব্যক্তি সেখানে অবস্থান নেন।
৪ ঘন্টার উপরে ভূমি মালিকরা রাজউকের প্রধান কার্যালয় অবরোধ করে রাখেন। তারা রাজউকের নানা স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন। রাজউক চেয়ারম্যান এবং ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এর পদত্যাগ দাবি করেন। ভূমি মালিকরা পরিকল্পনাবিদের নানা ছলচাতুরির কথা তুলে ধরেন। পরিকল্পনাবিদরা কিছু ভূমি ব্যাবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ড্যাপের সংশোধনীতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কিছু ভূমি মালিক।
আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ পুনর্বহাল না করলে রাজউকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুশিয়ারি দেন ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের নেৃতৃবৃন্দ। ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম. এ. সাজ্জাদ এই হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন আজ আমরা কয়েক হাজার ভূমি মালিক শান্তিপূর্ণভাবে রাজউক ঘেরাও করেছি। আমরা আজ তাদেরকে শুধু সর্তক করার জন্য ঘেরাও করেছি। আমাদের দাবি না মানলে আগামীতে কঠোর আন্দোলন হবে।
ভূমি মালিক তানভীরুল ইসলাম জনস্বার্থবিরোধী বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল না হলে আমরা রাজউকের সামনে আমরণ অনশন শরু করবো। তিনি বলে, যে ড্যাপ কৃষি জমি ধ্বংস করে, জলাধার ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে সেই ড্যাপ বাতিল চাই। আমাদের দাবি আদায় না হলে রাজপথ ছেড়ে যাব না।
ভূমি মালিক আমিনুর রহমান বলেন পতিত সরকারের কতিপয় দোসরদের প্রেসক্রিপশনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশকাটিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধায়নে তড়িঘড়ি করে দেশের স্বার্থবিরোধী বেআইনী ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ প্রকাশ করা হয় এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেড়ে নেওয়া হয় ঢাকা মহানগরের ভবন নির্মাণের অধিকার। নগরবাসীর মধ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হয় চরম বৈষম্য। যাহার ফলে কৃষি জমি ও বন্যা প্রবাহ এলাকা দ্রুত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে।
ভূমি মালিকদের নেতা এজাজ খান বলেন, এই বৈষম্যমূলক ড্যাপের জন্য এখনও পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাবাদি কয়েকজন নগর পরিকল্পনাবিদ মায়া কান্না করে বেড়াচ্ছেন। তারা একটি মহলের হয়ে ঢাকা থেকে নাগরিকদের বের করে দিতে চাচ্ছে।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সমন্বয়ক লিজা বলেন, আমরা বহুবার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি, আবেদন-নিবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের কান্না কেউ শুনছে না। জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও আমরা আজ মৌলিক অধিকারের অন্যতম আবাসন তৈরির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমাদের যেহেতু জমির স্বল্পতা আছে, সেই বিবেচনায় ঢাকা মহানগরের ড্যাপ ২০২২-৩৫ এর বিতর্কিত বিধি-বিধানগুলো স্থগিত করে ঢাকা মহানগরের মহল্লাগুলোর রাস্তা প্রশস্তকরণ ও জনস্বার্থে মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি-বিধান অনুসারে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে হবে।
সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বলেন, পরিতাপের সঙ্গে সমবেত হয়েছি। দেশের আইন হয় জনস্বার্থে, জনস্বার্থ পরিপন্থি হলে হয় না। প্ল্যান অনুমোদন নিতে হয়, নকশা নিতে একেক সময় একেক আইন করা হয়। প্রকৃত অবস্থা দেখে আইন করে না। অন্যদের কথায় করা হয়। তিনি আরও বলেন, গুলশান, বারিধারায় এক আইন আর অন্য এলাকায় আরেক আইন- এটা হয় না। ২০০৮ সালের যে আইন কার্যকর ছিল সেটাই যথাযথ ছিল। বিনা টাকায় নকশা হয় না, নকশার জন্য আবেদন করা হলে এক মাসের মধ্যে পাশ করা সম্ভব। কিন্তু টাকা না হলে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়।
উল্লেখ্য ফার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ভূমি মালিকগণ ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তা-ঘাটগুলো অপ্রসস্থই থেকে যাচ্ছে এবং ফাঁকা জায়গাগুলো/সেমিপাকা জায়গাগুলো/পুরাতন জরাজীর্ন ভবনগুলো অস্থাস্থ্যকরই থেকে যাচ্ছে।
রাজউক ঘেরাও কর্মসূচীতে পাশের বাড়ি ১০ তলা আমার কেন ৫ তলা এমন
স্লোগান দেন ভূমি মালিকরা। এছাড়া তারা আরো নানা ধরনের স্লোগান দেন।
১. বৈষম্য ও অসঙ্গতিপূর্ণ ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
২. জলাধার আইন ভঙ্গ করে প্রণীত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৩. স্বৈরাচার আমলে প্রণীত বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৪. কৃষিজমি ধ্বংসকারী ড্যাপ বাতিল করতে হবে।
৫. জনস্বার্থ বিরোধী ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৬. পতিত সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৭. বন্যাপ্রবাহ এলাকা ভরাটের লাইসেন্সকৃত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৮. পতিত সরকারের দোসরদের স্বার্থে পরিকল্পনাবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদ দ্বারা সম্পাদিত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৯. ২০০৮ এর নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের সুযোগ দিতে হবে।
১০. আগের নিয়ম অনুয়ায়ী বাড়ির উচ্চতা ও ঢাকা শহরের রাস্তার প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ২০ ফুট হওয়া চাই।
১১. বৈষম্যমুক্ত দেশ চাই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে চাই।