প্রচ্ছদ বিশেষ খবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস : “জানুন স্ট্রোকের লক্ষণ, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন”।

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস : “জানুন স্ট্রোকের লক্ষণ, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন”।

0
স্ট্রোক দিবস

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, “জানুন স্ট্রোকের লক্ষণ, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন”। স্ট্রোক মূলত অসংক্রামক একটি রোগ। এর মূল কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০ অনুযায়ী, মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর মধ্যে স্ট্রোক দ্বিতীয়। দেশে বছরে ১৮ লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। প্রতি চার জনের একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোক মস্তিষ্কের (ব্রেইন) অসুখ। কোনও কারণে যদি মস্তিষ্কের কোনও অংশে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক থেকে প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আজ শুক্রবার (২৯ অক্টোবর)

বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রথম ১৫টি শীর্ষ কারণের মধ্যে রয়েছে হার্ট অ্যাটাক, যা মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে ব্রেইন স্ট্রোক (১০ শতাংশ)। মোট মৃত্যুর ১৩.৬ শতাংশের জন্য দায়ী শ্বাসজনিত রোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগ। এছাড়া মোট মৃত্যুর ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, লিভার ক্যানসার, কিডনি রোগ।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, ওজন বেশি, শাকসবজি-ফলমূল না খাওয়া এবং শারীরিক অ্যাক্টিভিটিজ না থাকা মানুষই স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকলেও শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। আর স্ট্রোকের ঝুঁকিতে নারী পুরুষ প্রায় সমান সমান বা কিছু কিছু কারণে পুরুষের ঝুঁকি বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি চার জনের একজনের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর এটা যেকোনও বয়সে হতে পারে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মুখ-হাত বেঁকে যাওয়া, হাত দুর্বল হওয়া, কথা জড়ায়ে যাওয়া হচ্ছে স্ট্রোকের লক্ষণ। সেই সঙ্গে কারও ব্যালেন্সে সমস্যা এবং চোখে দেখতে সমস্যা হওয়াও স্ট্রোকের লক্ষণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক জীবনাচরণ ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গেলেই স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সঠিক ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, ধূমপান পরিহার করা এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। সেই সঙ্গে চিকিৎসকরা জোর দিয়েছেন স্ট্রোক হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার প্রতি। যত দ্রুত স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। কিন্তু দেরি হলে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কিছু থাকে না।

দেশে বছরে ১৮ লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দেশজুড়ে এক গবেষণায় এ ফলাফল পেয়েছে বলে জানান নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার।

স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে জানিয়ে অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যে স্ট্রোক হয় তাকে বলা হয় ইসকেমিক স্ট্রোক। আর মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত মস্তিষ্কের ভেতর জমাট বেঁধে স্ট্রোক হলে তাকে বলা হয় হেমোরেজিক স্ট্রোক। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই ইসকেমিক স্ট্রোক আর বাকিটা হেমোরেজিক স্ট্রোক। আর দুই ধরনের স্ট্রোকের ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ চিকিৎসা দুই রকম।

তিনি বলেন, দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ১১ দশমিক চার জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন আর প্রায় পাঁচ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। যারা ইতোমধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন আর তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগে। এসব বিভাগে প্রতি হাজারে ১৪ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। আর সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে।

ডা. অসিত চন্দ্র সরকার জানান, যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৪৮ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন ৩৬ শতাংশ রোগী, অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে ১৯ শতাংশের, মানসিক চাপের কারণে স্ট্রোক হয়েছে ১৭ শতাংশ রোগীর। সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, আমি যেহেতু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছি, এই হাসপাতালের সিচুয়েশন থেকেই পুরো দেশের অবস্থা বোঝা যায়। “এ হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগীর ১৫ থেকে ২০ শতাংশই স্ট্রোক রিলেটেড”। প্রতিদিন মেডিসিন বিভাগের চারজন রোগীর মধ্যে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত থাকে। সুতরাং স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা অনেক, বলেন অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার।

আরও পড়ুন : স্ট্রোকের ঝুঁকি শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদেরই নয় কমবয়সেও হতে পারে

আইসিডিডিআর,বি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স অ্যান্ড হসপিটালের যৌথ সহযোগিতায় “বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ব্যাপকতা: জাতীয় সমীক্ষা”র ফলাফলে জানা যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের সংখ্যা ছিল ১.১ মিলিয়ন। তাদের মধ্যে ০.২৮ মিলিয়ন পুরুষ এবং ০.৮৮ মিলিয়ন নারী।

আর ডিমেনশিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে স্ট্রোক। আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ও ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল এলাকায় জরিপকালে দেখা গেছে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন, যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং তাদের ৪০ বছরের বেশি বয়স। আর দেশজুড়ে ষাটোর্ধ্ব মানুষ নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ১০ জনে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত।

যাদের স্ট্রোক হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে বলেন ড. আলিয়া নাহিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ সবুজ বলেন, শিশুদের জাঙ্ক ফুড দেওয়া যাবে না, তাদের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ বাড়াতে হবে। শিশুরা যেন কোনোভাবেই মোবাইলের প্রতি আসক্ত না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ, স্ট্রোকের লক্ষণ জানতে হবে। লক্ষণ জানলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

শেয়ার করুনঃ

কোন মন্তব্য নেই

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version