রাজস্ব আয় বাড়াতে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী বাজেটে করহার নির্ধারণে তেমন কোন পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বরং চাল, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের ভ্যাটহার কমানো হবে। প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরের পাশাপাশি দেশের ৮২টি উপজেলায় আয়কর অফিস রয়েছে এর সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ উপজেলায় আয়কর অফিস এবং পৃথক গোয়েন্দা বিভাগ চালু করাসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রতিবছর যে হারে বাজেটের আকার বাড়াতে হচ্ছে, সেই তুলনায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। আবার যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাদের ঘাড়েও বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দিতে চায় না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে সবাই যাতে স্বাচ্ছন্দে কর ও ভ্যাট দিতে পারে সেই কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রাক-বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠকে বলেন, নতুন বাজেটে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে না। বাজেট হবে সবার জন্য স্বস্তিদায়ক। এমনকি ভোগ্যপণ্যের মতো নিত্যপণ্যের ভ্যাট কমানো হবে।
তিনি বলেন, কর না বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এজন্য করের আওতা বাড়াতে হবে। কর প্রদানে সক্ষম এরকম প্রতিটি ব্যক্তি যাতে করের আওতায় আসে সেদিকে এনবিআরকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। তবে পণ্যভিত্তিক ভ্যাটের হার ভিন্ন ভিন্ন হবে। এদিকে ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের মতো কর বিভাগেও গোয়েন্দা বিভাগ চালু করা, উৎস কর আদায় ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করতে আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন ও অনলাইন ট্যাক্স ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
সম্প্রতি আয়কর আদায় বাড়ানোর লক্ষে এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষে একটি প্রস্তাব সংবলিত প্রতিবেদন এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই কমিটি কয়েকটি সুপারিশসহ ওই প্রতিবেদন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে জমা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, যাদের করযোগ্য আয় আছে, তাদের কর দিতে হবে। কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চলছে। এজন্য আধুনিক কর প্রশাসন প্রয়োজন। উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস বিস্তৃত করা হলে করযোগ্য ব্যক্তিদের করের আওতায় আনা সহজ হবে।
এনবিআরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ই-টিআইএন সংখ্যা ৩৬ লাখের কিছু বেশি। নতুন করে ১৫ লাখের বেশি করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ চাকরিজীবী। তবে এনবিআর মনে করছে, দেশের ১৭ কোটি মানুষের দেশে কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে অন্তত ১ কোটি মানুষের। অন্যদিকে ৩৬ লাখ টিআইএনধারী হলেও গত বছর আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন ১৮ লাখের মতো। অর্থাৎ বাদবাকি ১৮ লাখ টিআইএনধারীর তথ্য জানতে পারেনি এনবিআর। এসব টিআইএনধারীর বিষয়েও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে সংস্থাটি।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে ঢাকা বাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনার উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকা শহরের যত ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে, এগুলো জরিপ করা হবে। এই ফ্ল্যাট ও বাড়ির মধ্যে থাকা ভাড়াটে ও ফ্ল্যাটের মালিকদের সবাইকে রিটার্নের মাধ্যমে করের আওতায় নিয়ে আসতে এনবিআরের একটি টিম কাজ করছে।