চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন।
উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ কমেছে ১ হাজার ৪৪৯।
কোন বোর্ডে পাসের হার কত
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপরই রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩ শতাংশ। পাসের হারে তৃতীয় বরিশাল বোর্ডে পাস করেছে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
জিপিএ-৫ ১৮২১২৯, এগিয়ে ছাত্রীরা
জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাদের মধ্যে মেয়ে ৯৮ হাজার ৭৭৬ এবং ছেলে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সেই হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ১৫ হাজার ৪২৩ জন।
পাশাপাশি গত বছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ জন।
কোন বোর্ডে জিপিএ-৫ কত
সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৯ হাজার ১৯০ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ৩৭৪ জন এবং মেয়ে ২৬ হাজার ৮১৬ জন। এছাড়া বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১৪৫ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৬৩০ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৫১৫ জন। চট্টগ্রামে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৭৩ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭৫০ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ১০০ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ২৬৪, মেয়ে ৬ হাজার ৮৩৬ জন। সিলেট বোর্ডে জিপিএ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১। তাদের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৬১৬ এবং মেয়ে ২ হাজার ৮৫৫ জন। দিনাজপুর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন, ময়মনসিংহে ১৩ হাজার ১৯৭ জন, রাজশাহীতে ২৮ হাজার ৭৪ জন, যশোরে ২০ হাজার ৭৬০ জন। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে ১৪ হাজার ২০৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮১ জন।
ফলাফলে সব দিকে এগিয়ে ছাত্রীরা
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার, জিপিএ-৫ অর্জনের দিক দিয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন মোট ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন এবং ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। সেই হিসাবে ৫৯ হাজার ৪৭ জন ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
পাসের গড় হারের দিক দিয়েও এগিয়ে ছাত্রীরা। ১১টি বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৫ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সেই হিসাবে পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ২ দশমিক ৬১ শতাংশ এগিয়ে।
এছাড়া জিপিএ-৫ অর্জনের দিকে দিয়েও বেশ এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। এ বছর এসএসসিতে সব বোর্ড মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাদের মধ্যে মেয়ে ৯৮ হাজার ৭৭৬ এবং ছেলে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সেই হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ১৫ হাজার ৪২৩ জন।
পাসের হারে এগিয়ে যশোর, পিছিয়ে সিলেট
এ বছর এসএসসিতে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে পাসের হারে গত বছরের মতো এবারও তলানিতে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডটিতে এবার পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ডে পাস ৭৯.৬৬ শতাংশ
চলতি বছর বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দাখিলে মোট শিক্ষার্থী ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ জন। পাস করেছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯ হাজার ৭১৪ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০ জন। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ৭৩৯ এবং ছাত্রী ৭ হাজার ৪৬৭ জন।
কারিগরি বোর্ডের ফলাফল
এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৯ হাজার ৭২১ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭২ হাজার ৯৮৬ এবং ছাত্রী ২৬ হাজার ৭৩৫ জন। গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ বোর্ডে ফেল করেছে ২৬ হাজার ৬৬৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮১ জন।
শতভাগ পাস ও শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
এবার সারাদেশের ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৫৪টি। সেই হিসাবে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি।
অন্যদিকে শূন্য পাস অর্থাৎ, কেউ পাস করেনি-এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৪৮টি। এ বছর দেশের ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবার কেউই এসএসসি পাস করতে পারেনি। সেই হিসাবে এবার শূন্য পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে।
প্রবাসে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস ২৯৮ শিক্ষার্থী
এ বছর দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২৯৮ জন। ফেল করেছে ৪৯ জন। গড় পাসের হার ৮৫ শতাংশ ৮৮ শতাংশ। শতভাগ পাস করেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও করোনার কারণে গত তিন বছর যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। একইসঙ্গে পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণ নম্বরেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, স্বস্তির বিষয় হলো—আমরা এ শিডিউল বিপর্যয় কাটিয়ে ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছি। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে সব বিষয়ে, পূর্ণ সিলেবাসে ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যেই আমরা ফল প্রকাশ করতে পেরেছি।
এর আগে রোববার সকাল ১০টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ও ১১টি বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের ঘোষণা দেন। এরপর ১১টা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল দেখতে পারছেন।