জনতা ব্যাংক লিমিটেডের বার্ষিক সম্মেলন-২০১৯ বুধবার(১৩/০৩/২০১৯) কেআইবির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ব্যাংকের পরিচালক মসিহ্ মালিক চৌধুরী এফসিএ, এ. কে. ফজলুল আহাদ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অজিত কুমার পাল এফসিএ, মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, কাজী ছাইদুর রহমান (পর্যবেক্ষক), ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ ও মহাব্যবস্থাপকবৃন্দসহ উর্দ্ধতন নির্বাহীগণ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে ঋণগ্রহিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে যা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীকে আমরা সর্বাত্মক ছাড় দিয়ে সহায়তা করব। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে যারা সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাচাই বাছাই করে ঋণ প্রদান ও আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিশেষ নিরীক্ষা দল গঠনের বিষয়টি উল্লেখ করে নিরীক্ষা দলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান যাতে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম তরান্বিত হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মোঃ আসাদুল ইসলাম বিশেষ সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে ব্যাংক কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা উল্লেখ করেন, জনতা ব্যাংক সর্বপ্রথম সরকার ঘোষিত ঋণের সুদ হার ৯% বাস্তবায়ন করেছে। এতে সামগ্রিক মুনাফা অর্জনে কিছুটা প্রভাব পড়লেও আমরা তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে মুনাফার বিষয়টি সম্পৃক্ত থাকলেও জনতা ব্যাংক সমগ্র দেশের কল্যাণে দায়বদ্ধ। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি, রপ্তানি, ফরেন রেমিট্যান্স, এসএমই খাতে ঋণ এবং সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সহায়তা দিয়ে আসছি। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরো উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৯৬৪ কোটি টাকা অর্জিত হয়েছে এবং ২০১৯ সালে ১,৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি ব্যাংকিং লেনদেন ও সেবাসমূহ অধিকতর নিরাপদ ও সাইবার হুমকি মোকাবেলায় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নীতকরণসহ সমসাময়িক প্রযুক্তি যেমন : ব্লকচেইন (Blockchain), AI (Artificial Intelligence), IoT (Internet of Things) বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। শীঘ্রই ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, কল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। সকল ক্ষেত্রে কর্পোরেট সুশাসন, সততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সেবা প্রদান এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স নীতির পুনঃব্যক্ত করেন।
সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের আমানত ২,৬১১ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭,৫৫৫ কোটি টাকায়, ঋণ ও অগ্রিম ৭,৪১৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩,৩৭১ কোটি টাকায়, আমদানি ৭,৬৮৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২২,০৪১ কোটি টাকায় এবং ফরেন রেমিট্যান্স ৪০৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭,৬০৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময় ব্যাংকের লোকসানী শাখা কমে ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের ব্যবসায়িক সকল সূচকে আমাদের অর্জন ইতিবাচক হলেও বৃহৎ দু’টি গ্রুপভুক্ত ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ায় আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। ইতিমধ্যে শ্রেণীকৃত ঋণ ১,২০০ কোটি টাকা হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ আরো জানান, ‘আমরা ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ আদায় ও নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, ২০১৯ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ কাঙ্খিত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো’। এ প্রসঙ্গে তিনি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত এ্যাকশন প্লান-২০১৯ এর সফল বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। সিইও এ্যান্ড এমডি ২০১৯ সালকে ব্যবসায়িক সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেন।