বুধবার, ১৯শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

ঢাকা চেম্বার চায় এক অংকে ভ্যাট হার

প্রকাশঃ

মূল্য সংযোজন করের (মূসক বা ভ্যাট) হার সাধারণভাবে ১৫ শতাংশ থাকলেও বিভিন্ন খাতে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৫ শতাংশ করার ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য ‘জটিলতা সৃষ্টির’ পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ‘বিরোধ তৈরি হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

সংগঠনটি বলছে, উপকরণ কর রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি করের বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ বাস্তবতায় আগামী বাজেটে ভ্যাটের হার এক অংকে নির্ধারণের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনায় ‘স্বচ্ছতা’ আসার পাশাপাশি ব্যবসার পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন খাতে ‘ইতিবাচক প্রভাব পড়বে’ বলে মনে করছে বাণিজ্য সংগঠনটি।

মঙ্গলবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ঢাকা চেম্বারের তরছে ৪২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

ডিসিসিআই এর প্রস্তাবে করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, করহার হ্রাস, ব্যবসা-বান্ধব করনীতি ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, মূসক ব্যবস্থার সংষ্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতের সুরক্ষা, আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামোর সহজীকরণের মত বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

দেশে করদাতার হার বৃদ্ধি এবং করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এনবিআরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সুপারিশ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

এছাড়া করপোরেট কোম্পানিগুলো যাতে সহজে অনলাইনে কর রিটার্ন জমা দিতে পারে, সেজন্য ‘অটোমেটেড কর রিটার্ন পদ্ধতি’ চালু করার ওপর জোর দেন তিনি।

বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের আহ্বান জানান।

এছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে পণ্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য বিদ্যমান অগ্রিম কর পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তির প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি অনুষ্ঠানে বলেন, “কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালু ও বাজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকায় ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়াকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলছে।”

এ অবস্থায় তিনি ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

আলোচনার সভাপতি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “ক্রমান্বয়ে বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব নীতিমালার সংষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে এনবিআর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এনবিআর করজাল সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর, কারণ সমাজে কেউ কর দেবে কেউ দেবে না, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, “গত ১০ বছরে টিনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়ালেও কর প্রদানকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি, যা বেশ হতাশাব্যঞ্জক। আয়করের মত করপোরেট ট্যাক্স প্রদানের প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে দাখিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “দেশের ব্যবসায়ী সমাজ একমত পোষণ করলে, ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর বহাল না রেখে, সরকার ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে আগ্রহী, তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা একান্ত অপরিহার্য।”

ভ্যাট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রয়োজনে দেশীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এনবিআর একটি সফটওয়্যার তৈরি করে দিতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ