বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিতি বাংলাদেশি মিশনগুলোতে পাসপোর্ট নবায়ন সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসীরা বলছেন, পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও মালয়েশিয়ায় যেমন বাংলাদেশি শ্রমিকদের আটকসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট নিয়ে কোথাও ভ্রমণও করা যায় না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) তথ্যভান্ডারে (সার্ভারে) কার্যত কোনো ডেটা এন্ট্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এরফলে পাসপোর্ট নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) তিন কোটি এমআরপির জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া ও পাসপোর্ট ছাপানোর চুক্তি করেছিল মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান আইরিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে। গত জুনে চুক্তির তিন কোটি পাসপোর্টের কাজ শেষ হয়ে যায়। এরপর নতুন করে কোনো এমআরপির ডেটা এন্ট্রি হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, সমস্যাটির বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু জানানো হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয়ও মিশনগুলোতে কোনো নির্দেশনা পাঠাতে পারেনি। অবশ্য মিশনগুলো নিজেদের মতো করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে পাসপোর্ট সেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২৮ জুন এবং চলতি মাসের শুরুর দিকে জাপান, মালয়েশিয়া ও মালদ্বীপে বাংলাদেশের মিশন পাসপোর্ট নবায়নে দেরির বিষয়টি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়।
মালয়েশিয়ায় একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী কারখানার কর্মী বাংলাদেশি নাগরিক মো. শহীদুল ফোনে বলেন, তিনি এ বছরের শুরুতে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। গত ১৮ মার্চ তাঁর নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখনো পাসপোর্ট বুঝে পাননি। তিনি বলেন, ‘কবে পাসপোর্ট পাব, তা-ও বুঝতে পারছি না। আমার মতো অনেকেই পাসপোর্ট নবায়ন করাতে দিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষায় রয়েছেন।’
বাংলাদেশের আরও কয়েকটি বৈদেশিক মিশন থেকে পাসপোর্ট নিয়ে একই ধরনের সমস্যার কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। এরপর খোঁজ নিতে শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের জানিয়েছে, নতুন করে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান আইরিসকে দিয়ে আরও ৬০ লাখ এমআরপির কাজ করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি আইরিসের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা হচ্ছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান আইরিস তাদের ঢাকার কার্যালয় গুটিয়ে ফেলেছে। ফলে তাদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬০টি দেশে বাংলাদেশের মোট ৮০টি মিশন রয়েছে। মিশনগুলো ২০২০ সালে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪টি এমআরপি ইস্যু করে। ফলে এক মাস নবায়ন বন্ধ থাকলেই বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়। অবশ্য কিছু কিছু মিশন জানিয়েছে, তাদের সমস্যা কেটে গেছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস এ সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, তারা পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যাটির সমাধান করতে পেরেছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, তা জানতে গত চার দিনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।