‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’ বা ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার এ তহবিল । শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ দিয়ে এ ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পরিচালনার জন্য বিএসইসি প্রণয়ন করেছে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ । গত ২৭ জুন রুলসটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই রুলস অনুযায়ী, ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
ক্যাপিটাল মার্কেট
স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নসের মধ্যে ৪টি পদ বিএসইসি নিয়োগ দিবে। যাতে রয়েছে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি ৩টি সদস্য পদ। এ ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন নজিবুর রহমান। এছাড়া আরো তিন জন সদস্য হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
এছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বোর্ড অব গভর্নসের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া এ ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য একজন চিফ অব অপারেশন (সিওও) পদে একজনকে মনোনয় দেবে বিএসইসি। যিনি হবেন একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বোর্ড অব গভর্নসের সদস্যদের সবার পুঁজিবাজার, হিসাববিজ্ঞান, ফাইন্যান্স ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর অন্তত ৫ বছর অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করতে হবে। এই সদস্যদের কারও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শীর্ষ পদে থাকার পূর্ব ইতিহাস থাকা চলবে না। একজন সদস্য তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পাবেন। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের মেয়াদ বাড়ানো হবে। নিয়মিত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বোর্ড সদস্যরা একজনকে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেবেন। একটি অর্থবছরে তারা কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করবেন। তহবিলের জন্য সম্মিলিতভাবে জবাবদিহি করতে হবে বোর্ডকে। তারা বিএসইসির কাছেও দায়বদ্ধ থাকবেন।
২০ হাজার কোটির টাকার এ তহবিলের মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। আর বোনাস স্টক লভ্যাংশের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলটি পরিচালনা করবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
বিভিন্ন কোম্পানির সহ অবন্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে। তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের আছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দিয়েছি। বোর্ড অব গভর্নসের চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মনিত ব্যক্তি নজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিদের এখানে মনোনয়ন দিতে চেষ্টা করেছি। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ফান্ডটি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে এবং শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কাজে লাগবে বলে আশা করছি।’