বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পুনর্বিবেচনা না করলে সংকট তৈরি হবে আবাসন শিল্পে

প্রকাশঃ

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট (২০২২-২০২৩) পুনর্বিবেচনা না করলে আবাসন শিল্পে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে বলে আশংকা করছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর নেতৃবৃন্দ। ১৮ জুন, শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল এ ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩ সম্পর্কিত রিহ্যাব এর প্রতিক্রিয়া শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান। একই সাথে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের ন্যায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ লায়ন শরীফ আলী খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা এবং পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতিতে আবাসন শিল্পের বিভিন্ন অবদান তুলে ধরে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের বেসরকারী উদ্যোক্তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ খাত সম্প্রতি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন। উদীয়মান এই খাতে নানা রকম কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে। কোভিড মহামারির ধাক্কা, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেয়ার মত এই খাতে পর্যাপ্ত আর্থিক ঋণ প্রবাহ না থাকায় অনেকের বাসস্থানের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। একের পর এক সমস্যা এই শিল্পকে সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি সহ নানা কারণে সমগ্র গৃহায়ন খাতের বিক্রয় পরিমাণ প্রায় হ্রাস পেয়েছে। এই মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শংকা।

আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) বলেন “রিহ্যাব এর বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ছিলাম স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার ২ হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব পেয়েছে। গেল এক বছরে সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৫শতাংশ। গত বাজেট অনুমোদনের পর অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যার অভাবে দেশে বিনিয়োগ কম হয়েছে। স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে একটা ভালো সুফল আসবে। স্ব স্ব দেশ বৈদেশিক মুদ্রা কিভাবে দেশের ভেতরে রাখা যায় তার ব্যবস্থা করছে। কাজেই আমরা এই অবস্থায় যদি অপ্রদর্শিত অর্থ পাচারের সুযোগ না রেখে মূল ধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে পারি তবে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং আসন্ন সংকট মোকাবেলা করা সহজ হবে।”

ঘোষিত বাজেটে পাচারকৃত টাকা দেশে আনার বিষয়ে আইন করা হয়েছে, এটিকে সাহসী পদক্ষেপ উল্লেখ করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, দেশ থেকে যাতে টাকা পাচার না হয়, সেদিকেই আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং তহবিল গঠন। জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ব্যয় হ্রাস এবং সেকেন্ডারি বাজার ব্যবসা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য হ্রাস করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, গেল কয়েক মাস দফায় দফায় রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কর কমানো হোক। সেটি না করে উল্টো বিক্রয় পর্যায়ে প্রতি টন বিলেটের ওপর ২০০ টাকা ও রডে ২০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাড়ানো হয়েছে। ঘোষিত বাজেটে লিফট এর কর ১১% থেকে এক লাফে ১৯ % বেড়ে ৩০ শতাংশে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের তার এর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পাইপ এর ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জিআই ফিটিংস এর বিপরীতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। Aluminium Foil (Backed by others) উক্ত পণ্যটির ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল না। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এটার উপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। Tubes, plates, electrodes and similar products এর ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে নতুন ও নির্মাণাধীন প্রকল্প সমূহে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫০০ টাকা করে বৃৃদ্ধি পেয়েছে। ৫০০ টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে বাড়তি বহন করতে হবে প্রায় ১,০০০ টাকা। কারণ ডেভেলপাররা অধিকাংশ জমি গ্রহণ করি ৫০:৫০ রেশিওতে। বাড়তি দাম ক্রেতার উপর পড়বে এবং সবার জন্য আবাসন এই শ্লোগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে ও অনেকের আবাসনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঘোষিত বাজেট এর বাড়তি চাপ আবাসন খাতের সংকটকে আরো বৃদ্ধি করবে এবং এই সেক্টর আরো ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে যাবে। মানুষের মৌলিক অধিকার পুরনের স্বার্থে জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ পাশ করার আগে রিহ্যাব এর দাবি এবং প্রস্তাবনা সমূহ বিবেচনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ