প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন দেশেই উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু হয়েছে। দেশে উৎপাদিত এসব কাঁচামাল ভারত, নেপাল, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করা হচ্ছে। ফলে দেশে রপ্তানির তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন দুটি পণ্য। দুটিই প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল।
দেশ থেকে এরইমধ্যে রেজিন ও পিভিসি রপ্তানি শুরু করেছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিভিসি লিমিটেড। গত কয়েকমাসে এক কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা ১৫৬ কোটি টাকা মূল্যের ১৩ হাজার ১৯৩ টন পেট রেজিন রপ্তানি করেছে। ভারত, নেপালে, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে এসব পণ্য। এছাড়া পিভিসির উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শুধু এমজিআই নয়, সরকারের সহযোগিতা পেলে দেশের অন্য উদ্যোক্তারা এ ধরনের বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদনে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
বছরের মাঝামাঝি ভারত ও নেপালে প্লাস্টিকের কাঁচামাল রপ্তানি শুরু করে মেঘনা গ্রুপ। এখন তাদের কলেবর ও রপ্তানির আকারও বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশের গন্ডি ছাপিয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি শুরু হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে এমজিআই-এর কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৭০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্ল্যান্ট বসেছে, শুরু হয়েছে উৎপাদনও। উৎপাদিত রেজিন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে।
মেঘনা গ্রুপের এ কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বড় অঙ্কের ঋণসুবিধা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আইএনজি ব্যাংক। গ্রুপটির কারখানা থেকে প্লাস্টিকের মূল কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন উৎপাদন হবে, যা আগে ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্লাস্টিকের পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তিন লাখ ২৬ হাজার টন পিভিসি আমদানি করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার। আর পেট রেজিন আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার টন। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ডলার।
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম (ফাইন্যান্স) আফজাল হোসেন বলেন, এটা আসলে শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করবে। কারখানায় আমরা পিভিসি ও পেট রেজিন উৎপাদন করবো। এ দুটি আইটেম আমরা সম্পূর্ণ আমদানি করতাম। কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট আগে ছিল না। এগুলো আগে আমাদের চীন থেকে আমদানি করতে হতো। আমাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের ফলে এখন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, পিভিসি রেজিনের বার্ষিক চাহিদা চার লাখ টনের বেশি। যেখানে আমাদের ক্যাপাসিটি দেড় লাখ টন। বলা যায়, আমরা ৪০ শতাংশের মতো চাহিদা পূরণ করতে পারবো। এ রেজিন দিয়ে পিভিসি পাইপ, ফার্নিচার, প্লাস্টিক শিট তৈরি করা যাবে। পেট রেজিনের ক্ষেত্রে বলা যায়, ৯০ শতাংশ চাহিদা আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো।
কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে এ কারখানার নির্মাণ শুরু হয়। কোভিডের কারণে কারখানা স্থাপনের কাজ কিছুটা ধীরগতি আসলেও চলতি বছর থেকে তা উৎপাদনে আসে। কারখানাটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০৩০ সালে ১০ বিলিয়ন টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। সেক্ষেত্রে মেঘনা গ্রুপের এই কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার গবেষণাকারী বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে পিভিসি ও পেট রেজিন রপ্তানির বাজার ছিল প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের। প্রতিবছর এ দুই পণ্যের রপ্তানি বাজার পাঁচ শতাংশ হারে বাড়ছে।