ঋণগ্রহীতার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি)। শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখান থেকে কোনো ঋণগ্রহীতার তথ্য নিতে পারে। এজন্য নির্দিষ্ট হারে মাশুল পরিশোধ করতে হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিপর্যায়েও সিআইবি রিপোর্ট পাওয়ার দুয়ার উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ যে কোনো গ্রাহক তার সিআইবি তথ্য সরাসরি সংগ্রহ করতে পারবে।বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি মনে করছে, এতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। ঋণমান উন্নত হবে। পাশাপাশি সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ঋণখেলাপিদের। এছাড়া জামানত সম্পদের ভাণ্ডারের তথ্যকেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। ফলে কোনো গ্রাহকের ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারবে ব্যাংক।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিআইবির পরিসর বাড়াতে এরই মধ্যে একটি সার্কুলার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে অনলাইনে তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। উল্লেখ করা হয়, এখন থেকে চলমান ও বকেয়া ঋণের তথ্য পৃথকভাবে জমা দিতে হবে। এতদিন সব ঋণের তথ্য একসঙ্গে দেয়া হতো। পাশাপাশি সব ঋণ প্রস্তাবের তথ্যও জমা দিতে হবে সিআইবিতে। সূত্রমতে, সিআইবির সফটওয়্যারের সঙ্গে ঋণগ্রহীতাদের জামানত হিসেবে রাখা সম্পদের তথ্যভাণ্ডারকে সংযোগ করা হবে। এতে সহজেই জানা যাবে কোনো গ্রাহকের ঋণ গ্রহণের সীমা। নতুন কেউ ঋণ দিতে চাইলে তার সম্পর্কে জানতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের ঋণ তথ্য জমা রয়েছে সিআইবিতে। কিন্তু সেখানে সব ঋণ তথ্য একসঙ্গে রয়েছে। সেখান থেকে খেলাপি চিহ্নিত করতে হয় পৃথকভাবে। কিন্তু এখন থেকে সিআইবির অনলাইন সিস্টেমের ইনকোয়ারি মডিউলে সব ঋণ ও চলমান ঋণকে পৃথকভাবে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণকে আলাদাভাবে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি আরও শক্তিশালী হবে। ইনকোয়ারি মডিউলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব জনবল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই কোনো গ্রাহকের বকেয়া ঋণের সব তথ্য পাওয়া যাবে। কোন গ্রাহকের কোন কোন ব্যাংকে কী পরিমাণ ঋণ বকেয়া রয়েছে, তা জানা যাবে সহজেই। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন ঋণ বিতরণে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ব্যাংক।
এদিকে বিষয়টিকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সিআইবি তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এতে ভালো গ্রাহকরা তাদের মোট ঋণের তথ্য জানতে পারবেন। আবার খেলাপিরাও জানতে পারবেন তাদের অবস্থা সম্পর্কে। ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হবে না তাদের।’ প্রসঙ্গত, বর্তমানে যেকোনো নতুন ঋণ মঞ্জুর করতে হলে গ্রাহকের নামে সিআইবি রিপোর্ট নিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। কোনো খেলাপি গ্রহীতা নতুন ঋণ নিতে পারে না। আগে এটি কাগুজে প্রক্রিয়ায় হওয়ায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটত। এমনকি ভুয়া সিআইবি রিপোর্টও তৈরি করে ব্যাংকে জমা দেয়া হতো। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সিআইবি অনলাইনে করা হয়।
নতুন ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা নিজেদের সিআইবি রিপোর্ট নিজেই সংগ্রহ করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য নিমিষেই যাচাই-বাছাই করতে পারবে নির্বাচন কমিশনসহ যে কোনো সংস্থা। সূত্রমতে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ঋণ মঞ্জুর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি। এতে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হয় না। এমনটিই মনে করে আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পরামর্শ দেয়, সব ঋণ তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে। এতে খেলাপি হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে সহজেই জানা যাবে। আবার কোনো গ্রাহকের সম্পদের পরিমাণও উল্লেখ থাকবে পৃথকভাবে। এতে গ্রাহকদের ঋণসীমা বেঁধে দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৯২ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে চালু করা হয় সিআইবি। অনলাইন সেবা চালু করা হয় ২০১১ সালে। বর্ধিত আকারে নতুন সেবা চালু করা হয় ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে। বর্তমানে এক টাকা থেকে শুরু করে সব ঋণের তথ্য রয়েছে সিআইবিতে।