বাংলাদেশের পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে দেশের ১৪৩টি কারখানা পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি পোশাক কারখানা ‘লিড প্লাটিনাম’ সনদ পেয়েছে। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের সেরা ১০০ কোম্পানির ৩৯টিই বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার (২২ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতে কিছু অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার পর আমরা শিল্পটিকে পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিই। বিগত প্রায় এক দশকে আমাদের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরাপত্তা খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় এবং সরকার- ক্রেতা-উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আজ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি নিরাপদ শিল্প হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, পরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এই উদ্যোগ ও অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের অংশ হিসেবে গ্রিন ফ্যাক্টরি ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ৫০০ কারখানা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় আছে।
পানি ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অপচয় রোধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশগত মানোন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আইএফসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক শিল্পে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে বিজিএমইএ বৈশ্বিক প্লাটফর্ম ইউএসএফসিসিসিতে স্বাক্ষর করেছে বলে জানান ফারুক হাসান।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে গত দশ বছরে যে পরিবর্তনগুলো এসেছে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের দেড় হাজারের বেশি কোম্পানির ‘গ্লোবাল অর্গানিক টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ড’ সনদ রয়েছে, যা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। সরকার কর্তৃক গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ফান্ড প্রণয়ন করা হয়েছে যা দেশব্যাপী সবুজ শিল্পায়নের বিপ্লবকে বেগবান করেছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘কিউআইএমএ’-এর প্রতিবেদনে, এথিকাল সোর্সিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে। মূলত গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের গুণগত মান, কমপ্লায়েন্স, কর্মঘণ্টা ও শ্রম মানের বিভিন্ন দিক মূল্যায়ন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি এমন একটি সময়ে এসেছে যখন করোনা মহামারীর কারণে এ শিল্প একটি সংকটময় সময় পার করছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই অর্জন নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
ফারুক হাসান বলেন, লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রেও এ শিল্প কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি কমপ্লায়েন্স, কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা বিধানেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। এসব অর্জনের মাধ্যমে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয় তা হলো- আমাদের সহনশীলতা, উদ্যোক্তাদের একনিষ্ঠতা, গতিশীলতা, ত্যাগ ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। আর এসব অর্জনের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সফল হয়েছি।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, গত ১০ বছরে আমরা রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১১ সালে যেখানে রপ্তানি ছিল ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৯ সালে আমরা ৩৩ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছি। ২০২০ সালে রপ্তানিতে বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব খুবই স্পষ্ট।
প্রসঙ্গতম, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দেশের প্রধান এই রপ্তানি খাত। তবে ধীরে ধীরে তা সামলে উঠতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে। রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র ইউরোপ, আমেরিকায় লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ায় ইতিমধ্যেই প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে নিট ও ওভেন মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।