সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যথা, হার্টের কিছু হয়নি তো?

প্রকাশঃ

বুকের বাঁ পাশে মাঝে মাঝে চিনচিনে ব্যথা করে। কিছুক্ষণ হাঁটলে হাঁপিয়ে যান। কিংবা বুক জ্যাম হয়ে আছে বলে মনে হয়। এটা কি হার্টের সমস্যার কারণে, নাকি অন্য কোনও কারণ আছে?

বুকের বাঁ পাশে ব্যথার সাধারণ চারটি কারণ হলো

১। আইএইচডি বা হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমা।

২। হার্ট অ্যাটাক হওয়া।

৩। প্যানিক অ্যাটাক।

৪। গ্যাস্ট্রাইটিস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা।

ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ যেভাবে বুঝবেন

সাধারণত আমরা হৃদরোগ বলতে যা বুঝি, সেটাই ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ। এই রোগে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলোতে চর্বি জমে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ব্যথা হয়। সাধারণত এই রোগ ৪০ বছরের আগে হয় না এবং যাদের হয় তাদের অধিকাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ থাকে। তাই কারও যদি বয়স ৪০-এর বেশি হয় এবং বুকে চিনচিনে ব্যথা করে এবং তার উচ্চরক্তচাপও থাকে তবে হৃদরোগের কথা মাথায় রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে কিছুক্ষণ ভারী কাজ, কিংবা হাঁটাহাঁটি করলে বা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে বুকে ব্যথা শুরু হয়। ব্যক্তি হাঁপিয়ে ওঠেন। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। বুক ধড়ফড় করে। ব্যথা বাঁ বাহু ও ঘাড়ের দিকে যেতে পারে। সঙ্গে ঘেমেও উঠতে পারে শরীর। কিছুক্ষণ পর এই ব্যথা চলে যাবে। এমনটা দুই-একদিন পরপর হতে পারে।

আবার অনেক সময় বেশি খেলেও তীক্ষ্ম একটা ব্যথা হয়। এর কারণ হলো খাওয়ার পরপরই ভারী কাজ করা কিংবা হাঁটাহাঁটি করা। তখন হার্টের অধিক পরিমাণ রক্ত সঞ্চালনের দরকার হয়। তবে যাদের ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ রয়েছে তাদের রক্ত সঞ্চালন কম হয়। এ কারণেও ব্যথা হয়।

করণীয়

হার্ট বিশেষজ্ঞ তথা কার্ডিওলজিস্ট দেখাতে হবে। ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, রক্তে চর্বির পরিমাণ দেখতে হবে। যদি প্রেশার বেশি থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিসিন নিতে হবে এবং হার্টের ওপর চাপ কমানোর ওষুধও খেতে হবে। কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ এবং রক্ত চলাচল সচল রাখার ওষুধও খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। সেইসঙ্গে চর্বিজাতীয় খাবার, লবণ, ধূমপান, অ্যালকোহল ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকজনিত বুক ব্যথা

সাধারণত ৪০ বছরের নিচে হার্ট অ্যাটাক হতে দেখা যায় না। তবে এর ব্যতিক্রম এখন ঢের দেখা যাচ্ছে। যাদের হার্ট অ্যাটাক হয়, তাদের সাধারণত আগে থেকেই হাই ব্লাডপ্রেশার কিংবা রক্তনালীজনিত ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ থেকে থাকতে পারে। অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাক রোগীর ইতিহাস নিয়ে জানা যায়, যেদিন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে সেদিন কিংবা আগের দিন তারা প্রেশারের ওষুধ খাননি। এ কারণেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

এমন অনেকে আছেন, তাদের যে উচ্চ রক্তচাপ বা আগে থেকে হৃদরোগ আছে, তারা তা ডাক্তারের কাছে না যাওয়ার আগে জানতেই পারেন না। তাই অনেকে বলে, সকালে সুস্থ দেখলাম হঠাৎ ঘুরে পড়ে মরে গেলো মানুষটা!

হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা যেভাবে বুঝবেন

হঠাৎ খাবারের পর কিংবা কোনও জার্নি করার পর কিংবা হাঁটাহাঁটি বা ভারী কাজের পর কিংবা উত্তেজনাবশত কারও সঙ্গে চেঁচামেচি করার পর বা বেশি দুঃশ্চিতার সময় বুকের বাঁ পাশে চাপ দিয়ে ব্যথা শুরু হয়। মন হবে বুক জ্যাম হয়ে যাচ্ছে। ব্যথা পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকবে। ব্যথা পেটের দিকে, পিঠের দিকে, বাঁ বাহুর দিকে ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। ব্যথার তীব্রতায় রোগী দাঁড়ানো থেকে বুক ধরে বসে যাবে কিংবা শুয়ে পড়বে। কপালে মুখে ঘাম দেখা দেবে।

বমি বমি ভাব বা বমি হবে। ব্যথা কমবে না। বরং বাড়তেই থাকবে। সাধারণত ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ-এর ব্যথায় রোগী পেছনে কিছুতে হেলান দিয়ে বসলে ব্যথা কমে। তবে হার্ট অ্যাটাক-এর ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা বাড়বে। তীব্র হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে সঠিক সময় চিকিৎসা করাতে না পারলে রোগী মারাও যেতে পারে।

করণীয়

যদি হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে বুঝতে পারেন তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ইমার্জেন্সি চিকিৎসা হিসেবে ৪টি অ্যাসপিরিন (৭৫ এমজি) ট্যাবলেট, ৪টি ক্লোপিডোগ্রেল (৭৫এমজি) একটা নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট ও অ্যাটরভ্যাস্টাটিন ট্যাবলেট পানিতে মিশিয়ে কিংবা রোগীকে দিয়ে চিবিয়ে খাইয়ে দিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

প্যানিক অ্যাটাকজনিত বুকে ব্যথা

সাধারণত ৪০ বছর বয়সের কম যারা, তাদের প্যানিক অ্যাটাক বেশি হয়। এক্ষেত্রে রোগীর আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের রেকর্ড না-ও থাকতে পারে। তারা অতিমাত্রায় দুঃশ্চিতা কিংবা কোনও কিছু নিয়ে ভয়ে থাকেন। সেটা হতে পারে পরীক্ষা ভীতি, জীবন নিয়ে ভীতি। এরাই প্যানিক অ্যাটাকে পড়েন।

এতে হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হবে। মনে হবে যেন বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। রোগী বলবে কিংবা তার কাছে মনে হবে একটু পর সে মরে যাচ্ছে। অর্থাৎ তার ভেতর মৃত্যুভয় বেশি কাজ করবে। হাতে-পায়ে কাঁপুনিও আসতে পারে। ‍বুক ধড়ফড় করবে। এক্ষেত্রে ইসিজি করলে নরমাল রিপোর্টই আসবে।

করণীয়

রোগীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলে তাকে অভয় দিতে হবে এবং সে সুস্থ হয়ে যাবে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। যেহেতু এটি মূলত মানসিক, তাই পরে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো প্রয়োজন।

গ্যাস্ট্রাইটিস বা অ্যাসিডিটিজনিত বুকে ব্যথা

এক্ষেত্রে ব্যথা বুকের বাঁ পাশে না হয়ে উপরিভাগে হবে। ব্যথায় জ্বালাপোড়ার ভাব থাকবে। খাবারের পর ব্যথা বেড়ে যাবে। খাবারের সময়ও একটা প্রতিবন্ধকতা মনে হবে। বমি ভাব হতে পারে। সাধারণত খাবারে অনিয়ম হলে, বেশি ঝাল বা তেলজাতীয় খাবার খেয়ে ফেললে গ্যাস্ট্রাইটিস বেড়ে বুকে ব্যথা হতে পারে।

হার্টের ব্যথায় যেমন বুক চিনচিন করে কিংবা ব্যথা বাহু ও ঘাড়ে ছড়ায়, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা তেমন হয় না। কারও ক্ষেত্রে মনে হবে তার পেট-পিঠ দুটোতেই তীব্র ব্যথা। বমির ভাব ও ঢেঁকুর আসবে। গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথা যে কোনও বয়সেই হতে পারে।

করণীয়

গ্যাস্ট্রাইটিসজনিত বুকের ব্যথা সাধারণত অ্যান্টাসিড জাতীয় সিরাপ খেলে কমে যায়। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্নও হওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় আলসারও এর কারণ হয়ে থাকে৷ সেটার চিকিৎসাপদ্ধতি আবার অন্যরকম।

লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ