দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার অ্যাকাউন্টের অর্ধেকই এখন বন্ধ। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে ৪ কোটি ১০ লাখ থেকে নিয়মিত লেনদেন হচ্ছে। বাকি ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা থেকে লেনদেন হচ্ছে না, অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।
বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় এবং নলেজ অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে মাঠ জরিপে এমন তথ্য মিলেছে। শনিবার ‘মোবাইল ব্যাংকিং-এর ১০ বছর: করোনা-পরবর্তী মাঠ-বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর বাংলামটরে উন্নয়ন সমন্বয়ের খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
জরিপের ফল থেকে জানানো হয়, চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের করোনাকালে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকারি ভাতা বা নগদ সহায়তা মোবাইল অ্যাকাউন্টে দেওয়ার কারণেই এমএফএস অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তারা। এসব মানুষ এ সেবা আর না নেওয়ার বড় কারণ এর খরচ বেশি। জরিপ প্রতিবেদনে এমএফএস সেবাগ্রহীতা বাড়াতে ক্যাশ আউট খরচ শূন্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। তবে বিকাশ, রকেট এবং নগদের গ্রাহক মোট গ্রাহকের ৬০ শতাংশ। জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা থেকে শুরু করে জামালপুরের মন্নিয়ার চর এলাকা পর্যন্ত মোট ৩২টি পয়েন্টে।
নিষ্ক্রিয় এমএফএস অ্যাকাউন্ট বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা অতিমারিতে সরকারের আর্থিক সহায়তা নিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। প্রয়োজন না থাকায় অনেকেই এসব অ্যাকাউন্ট আর ব্যবহার করছেন না। তাছাড়া এ সেবার খরচ আগের তুলনায় খানিকটা কমলেও খরচের পরিমাণ অনেক বেশি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এক দশক আগে যখন বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবা তথা এমএফএসের যাত্রা শুরু করেছিল, তখন প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সুলভে সহজ ডিজিটাল আর্থিক সেবা পৌঁছানোই প্রধান লক্ষ্য ছিল। করোনাকালে মহানগরী থেকে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সর্বত্রই নিম্ন আয়ের মানুষ এমএফএসের সুবিধা পেয়েছে। সে বিবেচনায় এমএফএস করোনার পরীক্ষায় ‘পাস’ করেছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এমএফএসের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করা খুবই সম্ভব। তবে এ জন্য দেশের সিংহভাগ মানুষকে এ সেবার আওতায় আনতে হবে। তার জন্য সেবার মান বাড়াতে হবে এবং খরচ কমাতে হবে।
নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ কেবল সরকারি ভাতার জন্যই এমএফএস অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। ফলে এখন মোট এমএফএস অ্যাকাউন্টের অর্ধেকই অচল। কীভাবে এ গ্রাহকদের অন্য লেনদেনেও এমএফএস ব্যবহারে উৎসাহিত করা যায় তা নিয়ে ভাবা উচিত।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অসীম কুমার দাশগুপ্ত বলেন, বর্তমানে এমএফএস কোম্পানিগুলোর দৈনিক টার্নওভার দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা অনেক ব্যাংকের থেকেও বেশি। এমএফএস সেবা জনপ্রিয় করতে পেমেন্ট ব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে। আর প্রতিযোগিতা বাড়াতে সব প্রতিষ্ঠানকে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।