রাবির প্রকৌশল অনুষদের বিভাগগুলোতে অনার্স শেষ করার পর মাস্টার্সে আগ্রহ কমছে শিক্ষার্থীদের। অনুষদের পাঁচটি বিভাগেই কমেছে মাস্টার্স করার প্রবণতা। ফলে প্রতি শিক্ষাবর্ষেই এই অনুষদের বিভাগগুলোতে মাস্টার্সে আসন ফাঁকা থাকছে।
কোনো কোনো ব্যাচে মাস্টার্সে কোনো শিক্ষার্থীই পায়নি এমন বিভাগও আছে অনুষদটিতে। বিভাগগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ৪-৫ বছর ধরে এর ধারাবাহিকতা চলে আসছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীরা আগের চেয়েও বেশি চাকরিমুখী হয়ে উঠছে। এটিকে ভালো দিক হিসেবে দেখতে চাইছে বিভাগগুলো।
মাস্টার্সে শিক্ষার্থী না পাওয়াতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে কোনো শিক্ষার্থী পায়নি বিভাগটি। আর চলমান ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৯ শিক্ষার্থী বিভাগটিতে মাস্টার্স করছেন। যেখানে থিসিস করছেন আটজন আর প্রজেক্ট করছেন ১১ জন।
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, অনার্স শেষ করেই আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই চাকরি পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণে এসব সার্টিফিকেটের চেয়ে কতটা সে কাজে দক্ষ বা যোগ্য এসব বিষয় দেখা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা চাকরিমুখী হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে গবেষণা বা উচ্চশিক্ষা নিতে চলে যায়।
রাবির প্রকৌশল অনুষদের ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৯ জন করে শিক্ষার্থী থিসিস নিয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। আর নন থিসিস গ্রুপে মাত্র দুইজন ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে। যেখানে আসন সংখ্যা মোট ৫০।
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ খন্দকার বলেন, যেসব শিক্ষার্থী চাকরি পায়নি বা উচ্চতর শিক্ষা বা গবেষণায় যেতে চায় শুধুমাত্র তারাই মাস্টার্স করছে। আবার কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছে না, তাই সময় কাজে লাগাতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে রাখতে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে।
ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগে ৭০ আসনের বিপরীতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৬ শিক্ষার্থী। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৬৫ শিক্ষার্থী, সবশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে থিসিস আর নন-থিসিস মিলিয়ে ৫৮ শিক্ষার্থী মাস্টার্সে ভর্তি হন বিভাগটিতে। প্রকৌশল অনুষদে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী মাস্টার্স করে এই বিভাগটিতে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোট আসনের প্রায় ৫০ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী মাস্টার্স করে বিভাগটিতে।
তবে বিভাগটির সভাপতি ড. জি এম শফিউর রহমান বলেন, গবেষণা, উচ্চতর ডিগ্রী কিংবা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে আগ্রহীরাই থাকছে মাস্টার্সে। অনেকে শিক্ষার্থীই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটে মাস্টার্স করছে। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায় অনার্স শেষ করে। স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীদের হাতে চাকরি দিতে পারছি, এটি আমাদের জন্য সুখবর।
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স করার এমন প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. একরামুল হামিদ বলেন, অনার্স শেষের পর শিক্ষার্থীরা চাকরি পেয়ে যান বলেই এ প্রবণতা বেশি। সিএসই ও আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সে কম ভর্তি হন।