লকডাউন চলাকালে দেশের বিভিন্ন খাতে বিপর্যয় দেখা দিলেও পুঁজিবাজার ফিরে পাচ্ছে হারানো প্রাণ। লকডাউনে তথা বিধিনিষেধের মধ্যেও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ার বাজার। গেল সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এতে লকডাউনের চার সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়লো প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘গতবারের মতোই এবারও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, যার ফলে গতিশীল হচ্ছে দেশের শেয়ার বাজার। তবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না এলে শেয়ার বাজারসহ সব সেক্টরেই চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।’ বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে।
ব্যাংক,বিমা এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কারণে আলোচিত সময়ে (২ থেকে ৬ মে) সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্য সূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো ৭ হাজার কোটি টাকা পুঁজি ফিরে পেয়েছেন।
আগের তিন সপ্তাহেও বড় অঙ্কের মূলধন বেড়েছে বাজারটিতে। আগের তিন সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ১১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে লকডাউনের চার সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ১৮ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এর ফলে পুঁজিবাজার থেকে দূর হচ্ছে আস্থা ও তারল্য সংকট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অলস পড়ে থাকা বিনিয়োগকারীদের ২১ হাজার কোটি টাকার ফান্ড শিগগিরই পুঁজিবাজারে আসছে। পাশাপাশি এখন থেকে বন্ডে বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে পারবেন। এ দুটি সুখবরে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরছে বাজার।
বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৮০৭ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার ৬২১ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৩২২ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ২০৮ টাকা। অর্থাৎ, লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা, যা ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
বেশির ভাগ শেয়ারের দাম ও সূচক বাড়ায় বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন ৬ হাজার ৯৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৪৪ টাকা বেড়ে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ কোটি ৭৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪ লাখ ৭০ হাজার ৭১২কোটি ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮০১ টাকা।
গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৪টির, কমেছে ৬৯টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮ কোম্পানির শেয়ারের। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ২৬ পয়েন্টে বেড়েছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১৩২ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫৬ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২২১টির, কমেছে ৬৯টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ৩৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৬ হাজার ২০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।