সোমবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

অনলাইন ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা নিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের শংকা

প্রকাশঃ

বর্তমানে সব ধরণেই পণ্যই এখন বাংলাদেশে অনলাইনে কেনা-বেচা হয়। ফেসবুকসহ অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্মের প্রায় কয়েক লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে খসড়া নীতিমালা করেছে, এর কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় আছেন।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন যে এতে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখেই কঠিন হবে। এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে নিবন্ধনের কথা বলছেন অংশীজনরা।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে তারা এই নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত করেনি। অংশীজনদের থেকে মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক পরিবর্তন আনা হবে। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুনরায় আলোচনায় বসেছে এবং বিভিন্ন অংশীজনের মতামত পর্যালোচনার কথা জানিয়েছে।

ফেসবুকে একটি পেজ খুলে গত কয়েক মাস ধরে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন ঢাকার বাসিন্দা ফারহানা আক্তার। কম দামে ভালো পণ্য দেয়ায় দ্রুত পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ফেসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসাকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনতে পারে, এমন খবর শোনার পর থেকে তিনি উদ্বেগে আছেন। একে তো ট্রেড লাইসেন্সের খরচ তার ওপর প্রতিবছর কর পরিশোধ করে ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়েই এখন সন্দিহান ফারহানা আক্তার।

“এখন যদি লাইসেন্স করা লাগে তাহলে কতো জায়গায় ঘুরতে হবে। এখানে তো কোন কাজ একবারে হয় না। তার ওপর সীমিত লাভ। সেখান থেকে কর দিব কি। এতো ঝামেলা থাকলে ব্যবসাই হয়তো ছেড়ে দিতে হবে,” বলেন তিনি।

ফারহানা আক্তারের মতো বাংলাদেশে ফেসবুকসহ আরও নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করছেন কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যার পরিসর দিন দিন বাড়ছে।

উদীয়মান এই খাতকে এখনই ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনার বিরোধিতা করেছেন ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকারের এই কঠোর বিধিমালার কারণে অনেকেই অনলাইন ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

বিশেষ করে ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করে যেসব ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা এগিয়ে গিয়েছেন, তারা ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ, কঠোর বিধিবিধান এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন, যা ই কমার্সের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর ডেপুটি জেনারেল মাহমুদুর রহমান বলেন, “যদি কঠিন নিয়মের ভেতরে ফেলা হয় তাহলে উদ্যোক্তারা আর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবসা করতে আসবে না। কিন্তু তাদের জন্য ব্যবস্থাটা যদি সহজ আর সুলভ করা হয় তাহলে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই দেশের অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই খসড়া নীতিমালায় সকল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে যাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস আছে তাদেরকে জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন তারা এই নির্দেশিকা কর আরোপের জন্য নয় বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচার বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধাসত্ত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে করেছেন। যার মাধ্যমে ভোক্তা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষা পাবে।

তবে লাইসেন্স নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটা নিয়ে অংশীজনদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছে মন্ত্রণালয়। উদ্যোক্তাদের বিকল্প নিবন্ধনের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সবার মতামতের ভিত্তিতে কয়েক মাসের মধ্যে নীতিমালাটি আইন আকারে চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানান মি. রহমান।

তিনি বলেন, “আমাদের টার্গেট ট্যাক্স আদায় না। আমাদের মূল টার্গেট ই-কমার্স ব্যবসায় শৃঙ্খলা আনা। তারপরও আমরা চিন্তা করছি ট্রেড লাইসেন্সের বিকল্প কোন সহজ নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে। যেন কেউ কোন অনিয়ম করলে তাকে ধরে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।”

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ