এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর বরগুনার ১০ যাত্রী বেঁচে ফিরলেও এখনো নিখোঁজ আছেন অনেকে।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বরগুনার নৌবন্দরে অপেক্ষা করেও অনেক যাত্রীর খোঁজ পাননি স্বজনরা। বন্দরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে বরগুনার ১৯ জন নিখোঁজ আছেন। এরা হলেন- বরগুনার মাইঠা এলাকার ইদ্রিস খান, নলী এলাকার আবদুল হাকিম, চাঁদপুরের মনোয়ারা, পাথরঘাটার টেংরার পপি আক্তার, পাথরঘাটা পৌরসভার তালতলা এলাকার আবদুর রাজ্জাক, পাথরঘাটার কালমেঘার কালিবাড়ি এলাকার রাকিব মিয়া, বরগুনা সদরের হাফেজ তুহিনের মেয়ে (নাম অজ্ঞাত), সদরের ছোট আমতলী এলাকার জয়নব বেগম, মির্জাগঞ্জ উপজেলার রিনা বেগম ও তার মেয়ে রিমা, বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার রাজিয়া ও তার মেয়ে নুসরাত, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের মইন, তার ছেলে আবদুল্লাহ ও শালি আছিয়া, বরগুনা ঢলুয়া এলাকার মোল্লারহোড়া গ্রামের তাসলিমা, তার মেয়ে মিম ও তানিশা এবং ছেলে জুনায়দ।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। দগ্ধদের মধ্যে ৭২ জনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। পরে পার্শ্ববর্তী দিয়াকুল এলাকায় বিপর্যস্ত লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। লঞ্চের একাধিক যাত্রী জানান, রাত ৩টার দিকে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। এসময় লঞ্চে বেশ কয়েকজন যাত্রী দগ্ধ হন। প্রাণে বাঁচতে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেন।
বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের রিপন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আমার ফুপাত ভাই মইন, তার ছেলে আবদুল্লাহ ও তার শালী আছিয়া নিখোঁজ আছে। হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিলেও তাদের সন্ধান মেলেনি। বরগুনা সদরের ঢালুয়া ইউনিয়নের মোল্লা হোরা এলাকার শিমুল সরদার বলেন, বিকেল হয়ে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। লঞ্চে থাকা আমার স্ত্রী তাসলিমা, দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মিম ও সুমনা আক্তার তানিশা এবং ছেলে জুনায়েদের এখনো কোনো খোঁজ পাইনি।
লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা সাদিক মৃধা বলেন, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ইঞ্জিনরুম থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। মুহূর্তে গোটা লঞ্চ ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ডেকে ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে উঠে ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপ দেয় আবার অনেকে চিৎকার করেন। এক পর্যায়ে উদ্ধারে কয়েকটি ট্রলার এগিয়ে আসে এবং যাত্রীদের অনেকে ট্রলারে উঠে তীরে নামেন।
তিনি আরও বলেন, মূলত আগুন লাগার পর লঞ্চটি তীরে নোঙর করার মত কেউ ছিল না। লঞ্চ জোয়ারের তোড়ে ভাসতে থাকে। বরগুনা নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, লঞ্চটিতে বিভিন্ন বয়সের ৩০০-৪০০ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের উদ্ধারে বরিশাল নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। আমরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।