মঙ্গলবার, ১৯শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

করোনা ভ্যাকসিনের যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে

প্রকাশঃ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। সেগুলোর ট্রায়াল পরিচালনার পর ফলাফল নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শতভাগ সফল না হলেও ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে। এসব ভ্যাকসিন বিশ্বকে আশা জাগলেও হতাশারও কারণ রয়েছে। আর তা হলো ভ্যাকসিনগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’র (এএএএস) সাময়িকীতে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গত শুক্রবারের (২৭ নভেম্বর) ওই প্রতিবেদনে ভ্যাকসিন নিয়ে হতাশার কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘ভ্যাকসিনগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জনগণকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

এএএএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মডার্নার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের যে ট্রায়াল পরিচালনা করা হয় সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভ্যাকসিন নেন কম্পিউটেশনাল বায়োলোজিস্ট লুক হাচিসন।

তিনি বলেন, ‘যখন করোনা টিকার দ্বিতীয় ইনজেকশন নেই তখন আমার বাহু ফুলে গিয়েছিল। ফোলা স্থান এমন আকার ধারণ করে, মনে হচ্ছিলো একটি হাসের ডিম।‘

৪৩ বছর বয়সী সুস্থ লুক হাচিসন ভ্যাকসিন নাকি প্লাসবো নিয়েছিলেন তা নিশ্চিত করেননি। তিনি বলেন, ‘ইনজেকশন নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে আমার হাঁড় ও মাংসপেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়েছিল। ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জ্বর উঠলো। আমি কাঁপতে লাগছিলাম। কখনো ঠাণ্ডা আবার কখনো হঠাৎ করেই গরম লাগছিলো। সারারাত ফোনের কাছে বসে ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম জরুরি সহায়তা নম্বর ৯১১ তে কল করবো কি না।’

লুক হাচিসনের এই লক্ষণগুলো ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ছিলো। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাকে পূর্বে কেউ ধারণা দেয়নি। আর জনগণকে আরও সতর্ক হয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে।’

আমেরিকান ওই সাময়িকীতে বলা হয়, ‘ওয়াশিংটনের সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজিস্ট দেবোরা ফুলারের ল্যাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দ্বিতীয় প্রজন্মের আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ভ্যাকসিনের এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদিও দীর্ঘমেয়াদী না কিন্তু জনগণ যখন ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করবে তখন তাদের উপলব্ধি কী হবে? উত্তরে দেবোরা ফুলারও একটি অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে জনগণ ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে পারেন।

করোনা ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে সুখবর দেওয়ার এক সপ্তাহ পরেই এ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সব মিলিয়ে গড়ে ৭০ শতাংশ কার্যকর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের যে সফলতার কথা বলা হয়েছে ওই একই সময়ের মধ্যে ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

মডার্নার ভ্যাকসিন এমআরএনএ ভিত্তিক। এমআরএনএ হলো সেলের সফটওয়্যারের মতো। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছে। ফাইজার এবং বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের মতো এটি ‘স্পাইক প্রোটিন’ গঠনে সেলগুলোর জন্য কোড তৈরি করে। বিজ্ঞানিরা খুব সতকর্তার সঙ্গে ভাইরাসটির একটি ক্ষুদ্র অংশ বেছে নেন ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে।

তারা ভেবেছিলেন সময়ের পরিবর্তনে হয়তো তার খুব বেশি মিউটেশন কিংবা পরিবর্তন হবে না। কিন্তু দেখা গেছে ভাইরাসটি স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে সেলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা সচল থাকে।

সারাবিশ্বে এসব ভ্যাকসিনের ছয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আরও ডজনখানেক করোনার টিকা ডেভেলপ হচ্ছে। ফাইজার ও বায়োএনটেক, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনগুলো যে আশা নিয়ে আসছে তার পাশাপাশি এসব ভ্যাকসিন নিয়ে যাতে হতাশায় পড়তে না হয় সে বিষয়েই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ