সুদ হার কমিয়েও বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারার কথা জানিয়েছে সিটি ব্যাংক । ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক (জানুয়ারি-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের পর বছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণের সুদ থেকে সিটি ব্যাংকের আয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা জুন শেষে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এছাড়া জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে সরকারি তহবিল নির্ভরশীল সুদহীন সেবাখাত থেকে ৪৬১ কোটি ৭০ লাখ টাকা আয় করেছে ব্যাংকটি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ১ লাখ টাকা বেশি; প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
১ এপ্রিল থেকে এই সুদ হার বাস্তবায়ন হলেও গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঋণপ্রবাহে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথমভাগে গ্রাহকের আমানতের সুদ বাবদ ৮৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সিটি ব্যাংক। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই মহামারীর মধ্যেও ব্যাংকটি ২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে পরিচালনা ব্যয় ৪৬ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের জুনের তুলনায় ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম আয় হয়েছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, মহামারীকালে পরিচলনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরও লোকবল অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, তাতে বছরের প্রথম ভাগে আয় কমেছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের অর্থনীতিতে ধীরগতি এবং ৯ শতাংশ সুদ হার বাস্তবায়নের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথমভাগে ব্যাংকের মুনাফায় ১৭ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।
“এই আয় কমার পেছনে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার কোনো ঘাটতি ছিল না। ব্যাংকের ব্যবসা বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বাস্তবায়ন এবং এই কঠিন সময়ে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব এতে ভূমিকা রেখেছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারী-জুন সময়ে সিটি ব্যাংকের মূল সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে ব্যাংকের ইকুইটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
‘ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ ও নীতি ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জুন মাস পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের এসএমই সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬টি। এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের পরিধি বেড়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সার্বিক ঋণ প্রবাহ গত বছরের জুনের তুলনায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
একই সময়ে নারী গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে আমানত গত ছয় মাসে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাসরুর আরেফিন বলেন, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সিটি ব্যাংক জুন পর্যন্ত ৭৩১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।