কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে পারলেও তাকে ঋণ খেলাপির আওতায় আনা যাবে না। বিভিন্ন শিথিলতার ভিত্তিতে চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এই হিসেবের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে পরিশোধ করা অর্থও বিবেচনা করতে হবে। গতবছর কেউ এক টাকাও পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। এ বছর শিথিলতার বিষয়টি ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বাড়ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের নেতিবাচক প্রভাব প্রলম্বিত হয়েছে। এ সময়ে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতিশীলতা বজায় রাখা এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের গতিধারা স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্য সমুন্নত রাখা দরকার। এ লক্ষ্যে আগের সার্কুলারে দেওয়া সুবিধার আওতায় ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ ডিসেম্বর মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করলে তা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির অবশিষ্টাংশ বিদ্যমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী একবছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের বিপরীতে ইতোমধ্যে আদায়কৃত অর্থ এ সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনের ক্ষেত্রেও আদায় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তরকরণ এবং এই ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
কিস্তি না দিলেও খেলাপি করেনি ব্যাংকগুলো, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে। শুরুতে গত বছরের জুন পর্যন্ত এ সুবিধা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দু’দফা সময় বাড়িয়ে গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ওই সময় অপরিশোধিত ঋণের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমপরিমাণ বেড়ে গেছে। আগের মতো ঢালাও সুবিধা না থাকলেও এবার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন শিথিলতা ছিল। বিশেষ করে মেয়াদি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হয়। আর চলমান ঋণের ওপর ২০২০ সালে আরোপিত অনাদায়ী সুদ ৬টি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। আর ৮টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে তলবি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে আগের মতোই কেউ কিস্তি না দিলেও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি না করার দাবি জানিয়ে গত ১৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এর আগে একই রকম দাবি জানিয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। তবে ব্যাংকাররা ঢালাও সুবিধা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছে।