ঘন কুয়াশায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে বিঘ্ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনেক ফ্লাইট ঢাকার আকাশে চক্কর মেরে নামতে বাধ্য হচ্ছে কলকাতা কিংবা মিয়ানমারে। এমন বিপর্যয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। সমস্যা দূর করতে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) আপগ্রেডেশনে গড়িমসি করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
জানা যায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ৪০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। সমস্যা দেখা দেয় প্রতি বছর শীতকালে। এ সময় রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম থাকায় প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা বা ১০টা পর্যন্ত ফ্লাইট অবতরণে বিঘ্ন ঘটে। ফলে অনেক ফ্লাইট ঢাকার আকাশে চক্কর মেরে কলকাতা বা মিয়ানমারে গিয়ে অবতরণ করছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব শাহজালাল বিমানবন্দরে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স মালিকেরা।
বেবিচক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালালে বর্তমানে আইএলএস-১ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ছয়শ মিটার পর্যন্ত উড়োজাহাজ ওঠা-নামায় সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যে কোনো পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করাতে হলে আইএলএস-২ ক্যাটাগরি লাগবে। এটি চালু করারও উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক।
সাধারণত বৈরী আবহাওয়া বা ঘন কুয়াশার কারণে পাইলট খালি চোখে রানওয়ে দেখতে না পারলে নিরাপদ অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে আইএলএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইলটকে এক ধরনের বেতার তরঙ্গ পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে সহজেই রানওয়ের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন পাইলট। এখন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস আছে, তার দৃষ্টিসীমা ছয়শ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৫০ থেকে শূন্য মিটার পর্যন্ত। ফলে পুরোনো আইএলএস দিয়ে ফ্লাইট ওঠা-নামা করানোয় বিঘ্ন ঘটছে।
গত ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টা। শীতের চাদরে মোড়া ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা। রানওয়েতে উড্ডয়নের অপেক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের উড়োজাহাজ। একই সঙ্গে অবতরণে সংকেতের অপেক্ষায় আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ আকাশে চক্কর দিচ্ছে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে অবতরণ বা উড্ডয়নের সংকেত দিচ্ছে না বিমানববন্দর কর্তৃপক্ষ।
এমন অবস্থায় জ্বালানি সংকটের আশঙ্কায় সালাম এয়ার, কুয়েত এয়ার, এয়ার অ্যারাবিয়া, জাজিরা এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার, মালিন্দো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাতটি ফ্লাইট কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটটি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
একই কারণে ওমান এয়ার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, হিমালয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারেনি বলে জানায় বিমানববন্দর কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ঘন কুয়াশায় গত ৩ জানুয়ারি সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ ছিল। এতে অর্ধশতাধিক ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এভাবে কিছুদিন পরপরই বিমানবন্দরে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরগুলোতেও ঘন কুয়াশায় দেখা দিচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে দুবাই থেকে যাত্রী নিয়ে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২২২ ফ্লাইট। এটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে কয়েক চক্কর দিয়ে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।