রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি)’র বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে এ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্ক ও সুইফটকে নিয়ে যৌথভাবে এ মামলা করা হবে।
তিনি বলেন, গভর্নরের নির্দেশনা অনুযায়ী, মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, মামলা হলে শিগগিরই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরিকৃত অর্থ উদ্ধার করে ফেরত আনা সম্ভব হবে।
রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন মামলার প্রস্তুতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল ফার্মকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ২০১৭ সালজুড়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফিলিপাইনের আদালতও আরসিবিসিকে দায়ী করেছেন। কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে ফেরত দিলেও বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করছে। ফলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার এক হ্যাকারের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করেছে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার পার্ক জিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
গতকাল দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, গত ৫ জুলাই ফিলিপাইনের আদালতে যে তথ্য উপাত্ত দেওয়া হয়েছে, সেখানেও আনুষ্ঠানিকভাবে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এফবিআইয়ের তদন্তেও হ্যাকিং প্রমাণিত হয়েছে। এফবিআই উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার পার্ক জিনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের অর্থ চুরি হয়েছিল, এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও এ ঘটনার তদন্ত করছে।
উল্লেখ, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ফেডে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে। এর মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া দুই কোটি ডলার উত্তোলনের আগেই আটকানো সম্ভব হয়। তবে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অপরাধীরা তুলে নেয়। শুধু অর্থ চুরির জন্য আরসিবিসিতে বেনামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
প্রসঙ্গত, ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির কাছে আছে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। সোলায়ার নামের একটি ক্যাসিনোতে গিয়েছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওই অর্থ ফিলিপাইনের আদালত ফ্রিজ করে রেখেছে। আর কিম অং ক্যাসিনোতে যাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার সে দেশের কোর্টের আদেশে ফেরত আনা হয়েছে। তবে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের হদিস পাওয়া যায়নি।