চোখে অঞ্জনি হচ্ছে চোখের পাপড়ি যেখান থেকে গজায়, সেই রেখা ঘেঁষে যে লাল লাল ছোট্ট দানা বা পুঁটলির মতো তৈরি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এগুলো স্টাই বা হরডিওলাম নামে পরিচিত।
অঞ্জনি হলে যা হয় –
- চোখ ফুলে লাল হয়ে যায়।
- চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হয়।
- পাতা ফেলতে গেলে চোখে ব্যথা হয়।
- চোখের পাতায় ফুসকুড়ির মতো বের হয়। অনেক সময় পুঁজও হয়ে যায়।
বাতাস লাগলে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে।
অঞ্জনি কেন হয়
চোখে অনেক রকমের গ্রন্থির মধ্যে একটি হলো মেবোমিয়ান গ্রন্থি। এই গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ভেতরে ময়লা জমে এর সংক্রমণ থেকে অঞ্জনি হয়। এতে কখনো অন্যান্য গ্রন্থিও আক্রান্ত হতে পারে। তবে সব সময় যে সংক্রমণের জন্যই অঞ্জনি হবে, তা নয়। মৃত কোষ, ময়লা বা তেল জমে চোখের পাতার ওপর থাকা ক্ষুদ্র তেল গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয়। তখন ভেতরে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেওয়ায় অঞ্জনি হয়। এটা চোখের ভেতরে ও বাইরে হতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, বিশেষ করে যাঁরা প্রয়োজন সত্ত্বেও চশমা ব্যবহারে উদাসীন থাকেন, তাঁদের মধ্যে এজাতীয় সমস্যা প্রবল।
চিকিৎসা
বারবার অঞ্জনি হলে গ্রন্থির মুখে কোনো সমস্যা বা দীর্ঘদিনের পাপড়ির প্রদাহ, পাপড়িতে খুশকি ইত্যাদি আছে কি না, দেখে নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। এর চিকিৎসা খুবই সাধারণ।
- এক টুকরো তুলার বা কাপড়ের বল গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে অন্তত চারবার সেঁক দিতে হবে।
প্রয়োজন হলে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগানো যেতে পারে। - এর চিকিৎসায় বরিক পাউডারের সেঁক বেশ জনপ্রিয়, এটি অনেক সময় জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।
লক্ষ রাখুন
ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলে অঞ্জনির সমস্যা কয়েক দিনেই সেরে যায়। - অঞ্জনি হলে কখনো চোখ ঘষবেন না, জোরে চাপ দেবেন না বা বারবার হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না।
- গরম সেঁক দিলে পুঁজ বেরিয়ে যাবে ও অঞ্জনি ভালো হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ডুবিয়ে পানি নিংড়ে চোখের ওপর ৫ থেকে ১০ মিনিট রাখুন। এভাবে দিনে বেশ কয়েকবার সেঁক দিন।
- বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে তুলায় করে চোখের পাতা পরিষ্কার করুন।
ব্যবহৃত টি-ব্যাগ ঠান্ডা করে চোখের ওপর রাখুন ৫ থেকে ১০ মিনিটের মতো। এতে কিছুটা আরাম পেতে পারেন। ব্ল্যাক টিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে বলে এটি ভালো কাজ করে। - চোখ লাল হলে বা বেশি ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের পাশাপাশি চশমা ব্যবহারের নির্দেশ থাকলে সেটি পালন করতে হবে।
লেখক: প্রাক্তন ফ্যাকাল্টি ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম