সব সংকট কাটিয়ে রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক সাফল্য দেখাচ্ছে পাশাপাশি এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিরলস প্রচেষ্টা ও দুরদর্শী নেতৃত্বে ব্যাংকটির পাশাপাশি বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (জেসিআইএল)। ২০২১ সালে বৈশ্বিক মহামারি ও পুঁজিবাজারের অস্থিরতার মধ্যেও ব্যাংকের এই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি বড় অংকের মুনাফা করে রেকর্ড গড়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে পরিচালন আয় ১২৫ কোটি ২৮ লাখ এবং পরিচালন মুনাফা করেছে ১১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। গত বছর পুঁজিবাজার অস্থিস্থিশীল থাকা সহ বিভিন্ন কারণে যখন অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই মুনাফা করতে পারেনি তখন বড় চমক দেখিয়েছে জেসিআইএল। ২০২১ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি গত এক দশকে সর্বাধিক লাভ করেছে। লভ্যাংশ ১৫ ভাগ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০২০ সালের তুলনায় গত বছর মুনাফা বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। ২০২০ সালে জনতা ক্যাপিটালের নিট মুনাফা হয়েছিল ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
গত ২৩ জুন অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এসব তথ্য জানানো হয়। জনতা ব্যাংকের এই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরেও ভালো মুনাফা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিনিয়োগকারী ও জনতা ক্যাপিটালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে যাওয়ার এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই ভালো মুনাফা করতে পেরেছে জনতা ব্যাংকের এই প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী শহীদুল হক এফসিএমএ বলেন, “জনতা ব্যাংক পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এস এম মাহফুজুর রহমান এবং ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দছ ছালাম আজাদের সার্বিক সহযোগিতাসহ পর্ষদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আমাদের কর্মীবাহিনীর কর্মপ্রচেষ্টার ফলে এ সাফল্য এসেছে। এই বড় অর্জনের পেছনে ম্যানেজমেন্ট ফি প্রত্যাহার, মার্জিন ঋণের সুদহার কমানো, ঋণাত্মক ইক্যুইটির শেয়ার হোল্ডারদের সুদ মওকুফের মত সময়োচিত সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। এতে আমাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে যায়।
যখন বাজারের অবস্থা খারাপ ছিল তখন অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই ফোর্সড সেল করে তাদের বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করেছে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্যদিকে বাজার খারাপ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বিনিয়োগ পুরোপুরি উঠাতে পারেনি। আর আমাদের বিনিয়োগ যেহেতু ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোতে ছিল, তাই আমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলাম।”
শহীদুল হক আরও বলেন, “করোনা মহামারির মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও নেগেটিভ হয়ে গেলেও তখন আমরা তাদের ওপর কোন ইন্টারেস্ট চার্জ করিনি। পরে যখন বাজার ভালো হলো তখন ভাল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দাম বেড়ে গেল। এতে আমাদের সুদ আয় এবং কমিশন উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হয়েছে, তেমিন বিনিয়োগকারীদের আস্থাও আমাদের ওপর বেড়েছে।
২০২০ সালে জেসিআইএল এর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.২৫ টাকা; যা ২০২১ সালে হয়েছে ১.৪৬ টাকা।
এদিকে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে জেসিআইএল এর ক্যাপিটাল গেইন বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুন। টাকার হিসেবে মুলধন ১৩ কোটি ৮৮ লাখ থেকে এক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। একই সাথে ডিভিডেন্ড আয় ৪ কোটি ৯৯ লাখ থেকে বেড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। একই সাথে ঋণাত্মক ইক্যুইটি আদায়েও বড় সাফল্য পেয়েছে জেসিআইএল। ২০২১ সালে প্রায় ১৭৩ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার নেগেটিভ ইকুইটি পজিটিভ ইকুয়িটিতে রুপান্তর করা সম্ভব হয়েছে।
জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্টের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শহীদুল হক, এফসিএমএ বলেন, “ভালো ভালো কোম্পানিগুলোকে আমরা বাজারে নিয়ে আসতে চাই। ২০২২ সালের মধ্যে নেগেটিভ ইকুয়িটি আমরা ৫% এর নিচে নামিয়ে আনতে চাই।