জমির মালিক ৬০ বিঘার বেশি হওয়া যাবে না, এমন বিধান রেখে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (২৮ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান। এর আগে ১৯ মে এ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
সচিব বলেন, আমাদের সামরিক শাসনামলে যে আইন ছিল সেগুলো প্রয়োজন অনুসারে বাতিল করে নতুন আইন করতে বলা হয়েছিল। আমাদের ল্যান্ড রিফর্ম অধ্যাদেশ ১৯৮৪ ছিল। সেটিকে সংশোধন করে নতুন করে ভূমি সংস্কার আইনের খসড়া ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উপস্থাপন করা হয়। সেটি আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই আইনে আগে যে ল্যান্ড রিফর্ম অধ্যাদেশ ছিল সেখানে যে ধারাগুলো ছিল, সে ধারা পরিবর্তন করে বা কয়েকটি জায়গায় সামান্য আপডেট করেছে। যেমন, আগে ছিল, ৬০ বিঘার বেশি কেউ কৃষিজমির মালিক থাকতে পারবে না। এখানে বলা হয়েছে যে, বিশেষ ক্ষেত্রে এটি শিথিলযোগ্য, সে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো সমবায় সমিতির সব সদস্য তাদের জমির মালিকানা যদি সমিতি অনুমতি দেয়, সেটি হতে পারে চা, কফি, রাবার, অন্য কোনো ফলের বাগানে ব্যবহৃত জমির জন্য, এটা প্রযোজ্য হবে না। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য কোনো ভূমি ব্যবহার করতে চায় তখন এটা প্রযোজ্য হবে না।
‘এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্প, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন হয়, তখন প্রযোজ্য হবে না। ওয়াকফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাস্টের ক্ষেত্রে এর মালিকানাধীন ভূমির আয় ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হয় এ কয়টা বিষয় সংযোজন হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও তথ্য ভাণ্ডার সংরক্ষণের একটা নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। যা আগের আইনে ছিল না।
তিনি বলেন, আর একটি বিষয় যোগ করা হয়েছে- তা হলো আগের আইনে ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনার কোনো আইন যদি কেউ ভঙ্গ করেন, তখন দুই হাজার টাকা জরিমানা ছিল। আজকে যে ড্রাফ উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে এর পরিবর্তে বলা হয়েছে, আইন ভঙ্গ করলে এক লাখ টাকা বা এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
৬০ বিঘার চেয়ে যারা অনেক বেশি সম্পত্তির মালিক তাদের ক্ষেত্রে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এরকম কেউ থাকে এবং যদি কেউ সে আইনের আওতায় মামলা করেন তাহলে নতুন আইনে যে শাস্তির বিধান আছে তা প্রযোজ্য হবে।
তাদের চিহ্নিত কীভাবে করা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে তো সে বিষয় বলা থাকে না। আইনে বলা আছে, যদি কেউ ৬০ বিঘার বেশি জমি নতুন করে কেনেন, তখন ওই অংশটা সরকারের নজরে এলে সেটা নিয়ে নিতে পারবে। আইনে যে ধারাটা সংযোজন করা হয়েছে, সেটা হলো এই যে আপনার ৬০ অধিক, আপনি নতুন কোনো মালিকানা নিতে পারবেন না। বলা হয় নাই এখানে ৬০ বিঘার বেশি থাকলে আপনি ছেড়ে দেবেন। যদি আপনার ৬০ বিঘা কৃষি জমি থাকে তাহলে নতুন করে আর মালিকানা নিতে পারবেন না। এটা আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে হোক বা নিজের কেনা হোক। ৬০ বিঘার বেশি আপনি আর মালিকানা নিতে পারবেন না।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।