মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের বড় উৎস সঞ্চয়পত্র

প্রকাশঃ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আদায়ের বড় উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্চয়পত্র। ব্যাংকে আমানতে সুদের হার কমে যাওয়ায় পেনশনভোগী ও মধ্যবিত্তরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকেছে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কর আদায় করছে এনবিআর।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা গত অর্থবছরে উৎস কর হিসেবে পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা থেকে ২ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা কর হিসেবে আদায় করেছে। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সংগৃহীত উৎস করের পরিমাণ এর আগের বছরের চেয়ে ৪৯ শতাংশ বেশি ছিল টাকার অংকে যা ১ হাজার ৯৪৬ কোটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬৩৮ কোটি টাকা।

গত দুই বছরে ব্যাংক থেকে পাওয়া সুদের হার কম থাকায় মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এই খাত থেকে আদায় করা করের পরিমাণ এত বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ শতাংশেরও বেশি। সেখানে গত আগস্ট মাসে ব্যাংকে আমানতে গড় সুদের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

সুদের হার বেশি হওয়ায় গত বছর মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশি সঞ্চয়পত্র কিনেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি এর আগের বছরের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেড়ে ১১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা হয়েছে। তবে আয় নির্বিশেষে সঞ্চয়পত্রে সুদের ওপর কর কেটে রাখার কারণে যারা বছরে ৩ লাখ টাকার চেয়ে কম উপার্জন করেন তাদেরকেও কর দিতে হচ্ছে যা প্রত্যক্ষ কর আদায়ের মূলনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সঞ্চয়পত্র থেকে অর্জিত সুদের ওপর থেকে কেটে নেওয়া কর অন্য ধরনের আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যায় না। ফলে প্রান্তিক করদাতাদের বেশি পরিমাণ কর দিতে হচ্ছে। কর বিশ্লেষক জসীম উদ্দিন রাসেল বলেন, এনবিআর যদি সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে অর্জিত আয়ের সঙ্গে অন্যান্য আয়কে সমন্বয় করার সুযোগ দিতো, তাহলে প্রান্তিক করদাতারা উপকৃত হতেন।

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, যদি একজন করদাতার বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা হয় এবং এর মধ্যে ১ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে আসে, তাহলে বর্তমান নীতি অনুযায়ী তিনি এই আয়কে অন্য আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবেন না এবং ফলশ্রুতিতে তাকে অতিরিক্ত কর দিতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যদি সমন্বয়ের সুযোগ দিতো, তাহলে সেই ব্যক্তিকে শুধুমাত্র ৫ হাজার টাকা কর দিতে হতো। কিন্তু এ ধরনের বিধান না থাকায় তার করের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ১০ হাজার টাকা হচ্ছে। জসীম উদ্দিন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে অতিরিক্ত করের বোঝা থেকে রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইকবাল মোস্তফা জানান, অনেক পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে পাওয়া আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এটি নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য অনেক বড় বোঝা। এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করিম জানান, ফাইনাল সেটেলমেন্টের নীতি করযোগ্য আয় নেই এরকম মানুষের জন্য বোঝাস্বরূপ।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি রিগ্রেসিভ করে পরিণত হচ্ছে। যাদের কোনো করযোগ্য আয় নেই (সঞ্চয়পত্র ছাড়া) তাদের জন্য কর ফেরতের ব্যবস্থা করা উচিত।’ রিগ্রেসিভ কর হচ্ছে এমন এক ধরণের কর, যেটি সবার জন্য একই হারে প্রযোজ্য হয়। এক্ষেত্রে উচ্চ আয়ের মানুষদের চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছ থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি হারে কর কেটে নেওয়া হয়।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স ডিপার্টমেন্টের অ্যাডজাঙ্কট শিক্ষক আমিনুল করিম আরও বলেন, কর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আয় সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করা।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ