ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। করোনা আক্রান্ত হয়ে জটিল রোগীরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছেন। কোথাও আইসিইউ শয্যা মিলছে না। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যাতেও ভিড় বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকার সরকারি ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালের মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হলেও এই দুই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা নাই। বাকি ৮টি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা বরাদ্দ ছিল ৯৫টি। এরমধ্যে বড় ৬টি হাসপাতালের ৭২টি শয্যার সবক’টিতে রোগী ভর্তি আছে।
এসব হাসপাতালের আইসিইউ সেবা পাবার জন্য শত শত রোগী অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন। এই ৬টি হাসপাতাল ছাড়া আরো দুটি হাসপাতালে আরো ২৩টি আইসিইউ শয্যা আছে। এরমধ্যে ৫টি শয্যা খালি আছে। এই দুটি হাসপাতালের ১টি হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল। এখানে ১৫টি আইসিইউ’র ১২টিতে রোগী ভর্তি। এই হাসপাতালে মূলত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করা হয়। আর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ৮টি আইসিইউ শয্যার ৬টিতে রোগী ভর্তি আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ শয্যার সবক’টিতে রোগী ভর্তি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪টি শয্যার একটিও খালি নাই। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি শয্যার সবক’টিতে রোগী আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টি শয্যাতে রোগী ভর্তি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি শয্যা থাকলেও খালি নাই একটিও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ’র সবক’টিতে রোগী। এর বাইরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি আইসিইউ’র ১২টিতে রোগী। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ৮টি শয্যার ৬টিতে রোগী ভর্তি।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা যেভাবে চোখ রাঙ্গাছে এতে করে সামনে কেমন পরিস্থিতি হবে সেটি আন্দাজ করা যাচ্ছে না। এভাবে যদি দ্রুতই সংক্রমণ বাড়ে তবে করোনা শয্যার পাশাপাশি আইসিইউ শয্যার সংখ্যা বাড়াতে হবে। না হলে জটিল রোগীদের বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে। বাড়াতে হবে অক্সিজেন সাপোর্ট। কারণ ঠিকমতো অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারলেও রোগীকে কিছু সময় বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহা. মাহাবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, যখন জটিল রোগীরা আসে তখন অপেক্ষাকৃত ভালো রোগীদের এইচডিইউতে দিয়ে ওই রোগীকে আইসিইউ সুবিধা দিচ্ছি। এ ছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়ে অন্যান্য রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শিহাব উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, ১৫-২০ দিন ধরেই আমাদের আইসিইউ শয্যা খালি নাই। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন থাকার কারণে রোগীদের কিছুটা সাপোর্ট দেয়া যাচ্ছে। তবে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমাদের দুটি জায়গায় সার্জারি ও মেডিসিন মিলিয়ে মোট ২৪টি আইসিইউ শয্যা ছিল। তার মধ্যে ১৪টি আগুনে পুড়ে গেছে। এখন ১০টা আইসিইউ দিয়েই রোগীদের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এখন সার্জারি ও মেডিসিনের রোগীদের একসঙ্গেই রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৫টি বেড বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা রোগীরা খুব জটিল পর্যায়ে গেলে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু রোগীদের অবস্থা জটিল হওয়ার আগেই আমরা ৪০টি এইচডিইউ শয্যায় নিয়ে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সাপোর্ট দিচ্ছি। ফলে রোগীরা এতটা জটিল হচ্ছে না। এ ছাড়া আমরা সাধারণ ওয়ার্ডেও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করেছি। রোগীরা ওয়ার্ডে থেকেও ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। তিনি বলেন, যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এটা আমাদের জন্য খুব ঝুঁকি ও এলার্মিং। এভাবে বাড়তে থাকলে রোগী রাখতে আমাদের হিমশিম খেতে হবে। অনেকের তখন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্য যারা সুস্থ আছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।