ঢাবি’র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে (সেন্ট্রাল লাইব্রেরি) বর্তমানে বিদ্যমান সুবিধায় সর্বোচ্চ এক হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়তে পারেন। তবে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে গ্রন্থাগারে তিন হাজার ১১০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়তে পারবেন। ফলে প্রতিদিন সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার যে দৃশ্য দেখা যায় সেটা আর চোখে পড়বে না বলে আশাবাদী গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার এ দৃশ্য সবারই ভাবনাকে স্পর্শ করবে। তবে আশার কথা, শিক্ষার্থীদের পড়ার জায়গা করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নত সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক গ্রন্থাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা বর্তমান দুর্দশার পরিবর্তে পাবেন আরামপ্রদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে পড়ালেখার সুযোগ।
প্রথমে তিন ধাপে ১৫ বছরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি সময় আরও কমিয়ে দুই ধাপে আট বছরের মধ্যে করার জন্য বলেন
ওই মাস্টারপ্ল্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমান তিনতলার পরিবর্তে হবে বিশালাকার ১২ তলা ভবনের গ্রন্থাগার। যার মোট আয়তন ৯০ হাজার ৮৮ বর্গফুট। ৯০০ জনের ব্যক্তিগত পাঠ এলাকা হিসেবে ২২ হাজার ৫৭১ বর্গফুট থাকবে। এছাড়া দুই হাজার ১০০ জনের জন্য দলগত পাঠ এলাকা হিসেবে থাকবে ৫২ হাজার বর্গফুট, যা মূল গ্রন্থাগারের ৭০ ভাগ। আরও থাকবে কম্পিউটার সুবিধাসম্পন্ন এলাকা, এখানে দুই হাজার ৮৭৩ বর্গফুট জায়গায় ১০০ জন বসতে পারবেন। এছাড়া ১০ জন গবেষকের জন্য থাকবে এক হাজার বর্গফুট জায়গা।
ঢাবি’র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিগত জিনিস সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রাখতে থাকবে লকারের ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত, ছোট ও বড় পরিসরে দলগত পাঠের জন্য আলাদা কক্ষ বিন্যাস করা হয়েছে। পড়তে পড়তে একঘেয়েমি এলে একাকি থাকার জায়গাসহ খাবার, চা, কফি ও মেডিটেশনের ব্যবস্থাও থাকবে। প্রাকৃতিক আলো ও নির্মল প্রকৃতি দেখার জন্য আলাদা জায়গা থাকার কথাও রয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। এছাড়া চলার পথে বিশেষ জায়গায় বিভিন্ন প্রদর্শনী, দুর্লভ ও নান্দনিক সংগ্রহ ও শিক্ষার্থীদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে।
শব্দদূষণ কমাতে দলগত পাঠকক্ষগুলোতে থাকবে সাউন্ডপ্রুফের ব্যবস্থা। নিরাপত্তা সুবিধা, হেল্প জোন, ডেস্কটপ কম্পিউটার ফ্যাসিলিটি, ওয়াইফাই, প্রিন্ট ও কপি স্ক্যানিং সুবিধা থাকবে শিক্ষার্থীদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের দুর্লভ পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধারের জন্য থাকবে ল্যাব। দুর্লভ জিনিসগুলো গ্রন্থাগারের জাদুঘরে রাখা হবে।
এছাড়া অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, শুটিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা ও হেল্প জোনে টাচ স্ক্রিন কেবিন রাখা হবে।
গ্রন্থাগারের তথ্য-প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ল্যাপটপ, ট্যাব, কিন্ডল, ই-বুক রিডারের মতো প্রযুক্তিপণ্য ধার নেওয়ার সুবিধা থাকবে। আইসিটি বেইজড ডিজিটাল লাইব্রেরি ইলেকট্রনিক রিসোর্চ সুবিধা (ই-ক্যাটালগ, ই-বুক, ই-জার্নাল) ডিআরএম বা ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে প্ল্যাজারিজম বা চৌর্যবৃত্তি যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উপ-গ্রন্থাগারিক (প্রশাসন) মো. নোমান হোসেন বলেন, বর্তমানে আমাদের যেসব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা আছে- মাস্টারপ্ল্যানে থাকা নকশা অনুযায়ী গ্রন্থাগার তৈরি হলে সেসব সমাধান হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা উন্নত দেশের মতো সব সুবিধা পাবেন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা গ্রন্থাগারকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। মাস্টারপ্ল্যানের প্রথম ধাপেই গ্রন্থাগারের কাজ হবে। এ গ্রন্থাগারে অধ্যয়নের অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে, যা হবে শিক্ষার্থীবান্ধব, আরামপ্রদ ও স্বস্তিদায়ক। এতে পড়ার সঙ্গে বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম করার ব্যবস্থাও থাকবে।