তেলের দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবার ১০০ মার্কিন ডলারের নিচে নেমেছে। কমেছে হিটিং অয়েল-প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও। রশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় আশা দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১০০ দশমিক ৯৫ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৫ দশমিক ৯৫ ডলার কম। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৯৭ দশমিক ৫২ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ দশমিক ৪৯ ডলার কম।
তবে সন্ধ্যা ৬টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় অয়েল প্রাইস ডটকমে দুই ধরনের তেলের দামই আরও কমতে দেখা গেছে। ওয়েবসাইটটির তথ্যমতে, মঙ্গলবার ব্রেন্টের দাম ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ (৮ দশমিক ৬১ ডলার) কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৯৮ দশমিক ২৯ ডলার। আর ডব্লিউটিআই’র দাম ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ (৮ দশমিক ৭১ ডলার) কমে হয়েছে ৯৪ দশমিক ৩০ ডলার।
এছাড়া, হিটিং অয়েলের দাম ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন ডলারে। আর প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে হয়েছে প্রতি ইউনিট ৪ দশমিক ৫৫৪ ডলার।
রয়টার্সের খবর অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত ৭ মার্চ বিশ্ববাজারে ব্রেন্টের দাম উঠেছিল ১৩৯ দশমিক ১৩ ডলার, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু তারপর থেকে এর দাম অন্তত ৪০ শতাংশ কমেছে। ওই সময় ডব্লিউটিআই’র দাম উঠেছিল ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ ১৩০ দশমিক ৫০ ডলারে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে এর দামও কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার কারণ সম্পর্কে র বিশ্লেষক তোশিতাকা তাজাওয়া বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইফুজিটোমি সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডে ইতিবাচক অগ্রগতির প্রত্যাশা অপরিশোধিত তেলের বাজারে চাপ কমার আশা জাগিয়েছে। এছাড়া চীনে করোনাভাইরাস মহামারি রোধে নতুন লকডাউনের কারণেও তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত সোমবার রাশিয়া-ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। মঙ্গলবারও দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রাসেলসে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার
ইউক্রেন আক্রমণের জেরে যু্ক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রাশিয়ার তেল, গ্যাস, কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে এই পদক্ষেপে আর কোনো মিত্রকে এখন পর্যন্ত পাশে পায়নি ওয়াশিংটন। ইউরোপীয় মিত্ররা জানিয়েছে, তারা এখনই রুশ জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্ট মূল্যে তেল কেনার চিন্তা করছে।
পুরোনো বন্ধু সৌদি আরবও সাম্প্রতিক সংকটে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দূরত্ব রাখছে। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে হোয়াইট হাউজ। একই ঘটনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজের ক্ষেত্রেও। রুশ তেলের বিকল্প খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র এখন শত্রুভাবাপন্ন ভেনেজুয়েলার দ্বারে ঘুরছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।